শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

কক্সবাজারে পাকা আমন ধান কাটার ধুম

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কক্সবাজারে পাকা আমন ধান কাটার ধুম
কক্সবাজারে পাকা আমন ধান কাটার ধুম

মাঠে মাঠে বাতাসে দুলছে সোনালি ধানের শীষ। পাকা আমন ধানের সুভাষে মো মো গন্ধ চারিদিকে। কক্সবাজার জেলার কৃষকরা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় আমনের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি।

চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সারাদেশে ৩.৫ লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মিষ্টি রোদে মাঠজুড়ে সোনালি রং বলে দিচ্ছে কৃষকের কষ্টের ফসল আমন ধান চাষের বাম্পার ফলন। পাকা ধানের মাঠ এখন হেমন্তের বাতাসে কৃষকদের মধ্যে উৎসব আনন্দে ভরপুর। মাঠে শুরু হয়েছে ধান কাটার মহা-উৎসব। কেউ কাটা ধান আঁটি বেঁধে মাথায় করে নিয়ে বাড়ির উঠানে ফেলছেন। কৃষক-কৃষাণীরা সেই ধান মাড়াই করা, ধান শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার ধানের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে দাম থাকায় খুশি তারা।

জেলায় কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার বৃষ্টিপাতের ফলে রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা ঘাটতির শঙ্কা ছিল। তবে এবার জেলায় ফলন ভালো হওয়ার কারনে সেই শঙ্কা কেটে গেছে। মুলত কৃষি অফিসের এ কার্যক্রম আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন। কৃষি অফিস উন্নত মানের বীজ সরবরাহ এবং আধুনিক চাষপদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করছে। বিশেষ করে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রোগ-বালাই মোকাবিলায় সহায়তা করছে।

কৃষকরা জানান, একসময় মরা কার্তিকে এসে কৃষক পরিবারে ধানের গোলা খালি হয়ে যেত। তখন সবাই আমন ফসলের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। এখন বদলে গেছে সেই হিসাব-নিকাশ। শস্যের বহুমুখীকরণের ফলে এখন সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন প্রান্তিক কৃষকরা। শীতের আমেজে চলছে আমন পাকা ধান কাটা। নবান্ন উৎসব হলো বাঙালি কৃষকদের প্রাণের উৎসব। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনদের নতুন ধানের হরেক রকমের পিঠা-পুলি খাওয়ানোর প্রস্তুতিও চলছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর। গত বছর ৭৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছিল ৭৮ হাজার ৮৪৫ হেক্টর। এরমধ্যে হাইব্রিড ১২ উফশী ৩৪ এবং দেশীয় তিন জাতেরসহ ৪০-৪২ জাতের আবাদ হয়েছে। কম সময়ে ফলন এবং কম খরচে এই নতুন জাতের ধান চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কক্সবাজারের অনেক কৃষক। ইতোমধ্যে জেলায় ৯০ শতাংশ জমিতে আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ধান আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাটা শেষ হবে। জেলার সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে উখিয়া, টেকনাফ এবং চকরিয়ায়।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জানান, 'আমাদের সুষ্ঠু তদারকি, কৃষকদের নিবিড় পরিচর্যা এবং সবার সম্মীলিত প্রচেষ্টায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারনে উদ্বৃত্ত খাদ্য জেলার প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের নীট উৎপাদনে অবদান রাখবে।'

সদরের ভারুয়াখালী এলাকার ওয়ালিদ ভুঁইয়া বলেন, এবার আমন মৌসুমে বার বার নিম্নচাপ দেখা দেওয়ায় ধান রোপণের পর ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে আশার চাইতে বেশি ফসল ঘরে উঠছে। এখনো মাঠে পাকা ধান রয়েছে। শিগগিরই পাকা ধান কাটা শেষ হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক জানান, এ বছর ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। এবার কৃষকদের থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের জন্য 'কৃষকের অ্যাপ' ব্যবহার করা হচ্ছে। ধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ এবার একবারেই ছিল না।

তিনি আরও জানান, জেলার উখিয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু, মহেশখালী কুতুবদিয়া, উখিয়া ও টেকনাফসহ প্রায় এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। গত বছর গড়ে চাল হেক্টর প্রতি তিন দশমিক ০.৫ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছিল। কিন্তু এ বছর হেক্টর প্রতি গড়ে তিন দশমিক ৫ মেট্রিক টন ফলন হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে