হুমকিতে ডান তীররক্ষা প্রকল্প, বিভিন্ন অবকাঠামো জমি ও বসতবাড়ি

ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ফের বালু উত্তোলনের মহোৎসব

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে এভাবেই ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বাল্কহেডে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে -যাযাদি
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বাল্কহেডে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে নদের ডান তীরঘেঁষে কয়েকটি পয়েন্টের মাধ্যমে বালু বিক্রির মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকাবাসীর কথায় তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে বালুর ব্যবসা। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীররক্ষা প্রকল্পসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন অবকাঠামো, আবাদী জমি এবং হাজার হাজার বসতবাড়ি। অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুইটি চর ভেঙে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। দেখে না দেখার ভান করে চলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাধীন রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর থেকে রমনা ইউনিয়নের ভরটগ্রাম পর্যন্ত এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীররক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে। এরই মধ্যে ওই এলাকায় কয়েক দফায় বস্নক পিচিংয়ে ধসও দেখা দিয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে তা মেরামত করে। নদীভাঙন রোধ এবং ডান তীররক্ষা প্রকল্প অক্ষত রাখতে ওই এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এদিকে, নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে বর্তমানে রমনা ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া জামেরতল এবং রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাচকোল বাজার থেকে ফকিরেরহাট পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে এলাকার প্রভাবশালীরা। এলাকাবাসী নিষেধ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে একদিকে হুমকির মুখে পড়েছে ডান তীররক্ষা প্রকল্পসহ হাজার হাজার একর আবাদি জমি ও জনবসতি, অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত বাঁধের রাস্তাটি বালু বহনকারী গাড়ির চাকায় ভেঙে যাচ্ছে। নিজেদের এলাকার নিশ্চিত ক্ষতি দেখেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না অসহায় এলাকাবাসী। মুখ খুলে কোথাও কথা বললেই হুমকি আসছে বলেও জানান স্থানীয়রা। সরেজমিন রাণীগঞ্জ গেলে উত্তোলিত বালুর দৃশ্য চোখে পড়ে। কাচকোল বাজার থেকে ফকিরেরহাট এলাকা পর্যন্ত ৬-৭টি এবং দক্ষিণ খরখরিয়া জামেরতল এলাকায় একটি বালুর পয়েন্ট দেখা যায়। কালিরকুড়া এলাকায় ২টি পয়েন্টের সামনে স্থানীয়দের দেওয়া বাঁশের ব্যারিকেট চোখে পড়ে। এ সময় ওই এলাকার দুলাল মিয়া, জহির আলী, দিনেশ চন্দ্র, আবু তালেব, জাফর আলী, ফিরোজ, আসাদ, মজনু, আফজাল হোসেনসহ অনেকে জানান- সামনের জমিগুলোতে চর সৃষ্টি হলে এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়াও বাম তীরে সৃষ্ট চর থেকে তারা নানা সুবিধা পান। ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুটি চর ভেঙে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। বর্তমানে যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে চর দূরের কথা, ডান তীররক্ষা প্রকল্প যে কোনো সময় ছুটে যেতে পারে। এছাড়াও সারাদিন বালু পরিবহণের ফলে রাস্তার ধুলায় তারা থাকতে পারেন না। এ কারণে রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে বালু পরিবহণ করা বন্ধ করা হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে পয়েন্ট মালিকরা তা খুলে দেয়। বালু পয়েন্ট ব্যবসায়ী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুল করিম বলেন, 'মঞ্জু হাজির পয়েন্টে আমার একটি শেয়ার দেওয়া আছে। এর বেশি আমি জানি না।' পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, 'বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানলাম। আমরা প্রশাসনকে জানাব।' চিলমারী নৌ-ফাড়ি থানার উপ-পরিদর্শক ফেরদৌস আলী জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।