গো-খাদ্য সংকটে পশু বিক্রি করছেন দুর্গাপুরের কৃষকরা

তবুও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত দাম

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার শিবগঞ্জ সাপ্তাহিক হাটে বেড়েছে পশুর কেনাবেচা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক ও খামারিরা তাদের পশু নিয়ে আসেন এই হাটে। প্রতি হাটে বেচাকেনা হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে। তবে কৃষকরা বলছেন আকস্মিক বন্যায় ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি পচে গেছে গবাদি পশুর খাদ্য খড়। গোখাদ্য অভাব আর খরচ মেটাতে না পারায় অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন গবাদি পশু। তবে হাটের হাসিল মওকুফ করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে। সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় কৃষকদের আয়ের অন্যতম পথ ফসল ও পশু লালন-পালন। এ থেকেই আয় হয় তাদের বাড়তি কিছু টাকা। তবে অক্টোবরের আকস্মিক বন্যায় ফসল পচে নষ্ট হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে গো খাদ্যেও। সংকট নিরসনে এখন অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন তাদের পালিত পশু। কৃষক মোহাম্মদ আবুল কালাম লালন পালনের জন্য গত চার মাস আগে একটি ফ্রিজিয়াম জাতের দুধের গাভি কেনেন। বন্যার পর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি আর লালন-পালনের খরচ বাড়ায় গাভিটিকে বিক্রি করতে হাটে তুলেছেন তিনি। দরদাম শেষে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে তার শখের গাভিটি। আবুল কালামের মতো প্রায় অনেক কৃষকেরই যেন একই অবস্থা। আকস্মিক বন্যার পর গো খাদ্যের সংকটে অনেক কৃষকই এখন দিশেহারা। তাই অতিরিক্ত খরচের বোঝা বইতে না পেরে অনেকেই পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে হাটগুলোতে তুলনামূলক বেচাকেনা বাড়লেও সে তুলনায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না কৃষক ও খামারিরা। তবে হাটগুলোতে ভিড় রয়েছে ক্রেতা বিক্রেতার। সীমান্তবর্তী দুর্গাপুরের শিবগঞ্জ সাপ্তাহিক হাটে আশপাশের উপজেলা থেকেও পশু নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এখানকার গরু পাইকারের হাত ধরে রাজধানী শহর ঢাকাসহ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে হাটগুলোতে ছোট থেকে মাঝারি প্রায় সব প্রকার গরুর চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে পশুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কথা মাথায় রেখে হাটের ইজারা কর মওকুফ করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বেচাকেনায়। যার ফলে আগের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে। বিক্রেতারা ও হাট পরিচালনাকারীরা বলছেন, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সিন্ডিকেট করে হাট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন। ছোট গরু এক হাজার টাকার উপরে দিতে হয়েছে তাদের। তবে এখন সেই টাকায় পরিবহণে খরচ মেটাতে পারছেন তারা। আর আগস্টের পর ইজারাদার পালিয়ে যাওয়ায় বাজার সুশৃঙ্খল ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে বিএনপির উদ্যোগে হাটের ইজারা কর মওকুফ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিবগঞ্জ পশুর হাট স্থানীয় পৌর থেকে প্রায় এক কোটি টাকার উপরে ইজারা পায় স্থানীয় ইজারাদার আবুল কাশেম। বেচাকেনা ভালো হলে এ হাটে আয় হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে আর উৎসবগুলোতে বেচাকেনা দাঁড়ায় কোটি টাকার বেশি। শিবগঞ্জ হাট পরিচালনাকারী খাঁন সুমন বলেন, 'গত অক্টোবরে আকস্মিক বন্যায় এ অঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই কৃষকদের কথা মাথায় রেখে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের নির্দেশে হাটের ইজারা কর মওকুফ করা হয়েছে। মূলত আমরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাজারটি পরিচালনা করছি। পরবর্তীতে আমরা কৃষকসহ সবার সঙ্গে বসে নামমাত্র একটি হাসিল নির্ধারণ করব।'