রাজশাহীর চারঘাটে অভিনব কায়দায় বা কৌশল পরিবর্তন করে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। সীমান্তবর্তী উপজেলার পদ্মা নদীতে মাছ ধরার ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে সহজে মাদক ঢুকছে বাংলাদেশে। গত কয়েক মাসে সীমান্তবর্তী উপজেলা চারঘাটে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকের চোরাচালান। এই উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর পাড়ায় পাড়ায় নির্বিঘ্নে বিক্রি হচ্ছে ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে ও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মাসিক সভায়। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়ন, চারঘাট পৌরসভা ও চারঘাট ইউনিয়নের প্রায় ১৮ কি.মি. এলাকা জুড়ে নদীভিত্তিক ভারত সীমানা। প্রায় প্রতিদিন এ উন্মুক্ত সীমানার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাদক দেশে ঢুকছে। ভারত থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে জড়ো করা হয়। পরে এসব মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে দরিদ্র নারী ও স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। স্থানীয়রা বলছে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও একশ্রেণির দালাল গোপনে বিক্রির কাজে মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে। ফলে বন্ধ হচ্ছে না মাদকের বাণিজ্য।
অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীরা অর্থের বিনিময়ে ডিঙ্গি নৌকার জেলেদের ব্যবহার করে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক নিয়ে আসে। এ সব মাদক ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসার জন্য গ্রামের ছোট ছোট টং দোকান ব্যবহার করে। এছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাদক সরবরাহে একশ্রেণির ছদ্মবেশী ছাত্রদের ব্যবহার করে। অভিনব কায়দায় ব্যাগের মাধ্যমে মাদক বহন করছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে মাদক সহজলভ্য হওয়ায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, রাওথা, পিরোজপুর ডালিপাড়া, গোপালপুর, মোক্তারপুর, গৌরশহড়পুর, ইউসুফপুর, টাঙ্গন, শলুয়ার হলিদাগাছী স্টেশন, নন্দনগাছী স্টেশন, পুঠিমারী এলাকা মাদক স্পট হিসেবে পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে এক শ্রেণির মাদক ব্যবসায়ী গডফাদাররা হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। এসব ব্যবসায়ীদের চিহিৃত করে আইনের কঠোর ব্যবস্থা না নিলে মাদক বন্ধ করা কঠিন।
চারঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর বলেন, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি, মডেল থানা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও নৌ-পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নদীপথে টহল জোরদার করে মাদক চোরাচালান রোধ করা চেষ্টা করছেন।
চারঘাট মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক বলেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীতে একটু ছন্দপতন হয়েছিল। এই সুযোগে কিছু মাদক ব্যবসায়ী অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক সক্রিয়। যার প্রমাণ কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণের ফেনসিডিল ও গাঁজা আটক হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।