সন্ধ্যার পর গ্রামবাসী থাকেন আতঙ্কে

সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের অভয়ারণ্য এলাকা রায়পুরার বাঁশগাড়ী

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

আমজাদ হোসেন, নরসিংদী
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের অন্যতম একটি এলাকা বাঁশগাড়ী। ৭টি পাড়া এবং ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত এলাকা। গ্রাম এবং ইউনিয়ন দুটোই বলা হয় এই বাঁশগাড়ি এলাকাকে। যেখানে ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার এবং মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। কিন্তু বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর দুর্গম এই গ্রামটি দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত হয়ে আছে। হামলা-মামলা, গুম, খুন এবং লুটপাট চাঁদাবাজের রেকর্ড গড়েছে এলাকাটি। বর্তমানে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য এলাকায় পরিণত হয়েছে এই বাঁশগাড়ী। যেখানে গ্রামের মানুষজন সন্ধ্যার পর থাকেন চরম আতঙ্ক উৎকণ্ঠায়। কখন কার বাড়িতে সন্ত্রাসী বাহিনী হানা দেয় সেই ভয়ের প্রহর গুনতে হয় এই গ্রামের সাধারণ মানুষের প্রতিটি ঘরে ঘরে। রায়পুরা থানা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত বাঁশগাড়ী এলাকা। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে এটি অনেকটাই দুর্গম। রায়পুরা থেকে ওই এলাকায় যেতে হলে দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। সরাসরি সড়কপথের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনও সেখানকার অপরাধ দমন বা নিয়ন্ত্রণ কোনোটাই এখনো পর্যন্ত করতে পারছেন না। দিন দিন ওই এলাকাজুড়ে অপরাধ বেড়েই চলছে। একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনী প্রতিনিয়ত অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা এবং মালামাল লুটে নিচ্ছে। গত তিন দিনে (১৭-১৯ নভেম্বর) এই বাঁশগাড়ী এলাকায় অন্তত দশটি বাড়িতে চাঁদবাজি বা লুটের ঘটনা ঘটেছে। এদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন এবং স্বর্ণালংকার লুটে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বাঁশগাড়ী এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হেলাল মিয়া স্থানীয় একটি বাজারে বিকাশের এজেন্ট হিসেবে দোকান নিয়ে কাজ করেন। সোমবার সন্ধ্যায় ৫-৭ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফাঁকা গুলি করে আতংক সৃষ্টি করে। হেলাল মিয়ার দোকান থেকে ক্যাশ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর থেকে ওই এলাকায় সন্ধ্যার পর সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হচ্ছে। এছাড়া, ৩নং ওয়ার্ডের মঙ্গল মিয়া, আব্দুর রশিদ, পাশা মিয়া, কাজী মিয়া, আকতার মিয়া, মানিক মিয়া (চায়ের দোকানদার), কাপড় ব্যবসায়ী মোস্তফা, ৪নং ওয়ার্ডের গরুর ব্যবসায়ী এবং ১নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম মিয়ার বাড়িতে লুট হয়েছে। এসব বাড়ি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার এবং মোবাইল ফোন লুটে নেয়। তবে, মোবাইল ফোনগুলো একদিন পরে টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। রায়পুরার শুধু বাঁশগাড়ী এলাকায় গত পাঁচ বছরে ১৫টি গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নরসিংদীর কোর্টে ১৫টি নথিভুক্ত মামলা রয়েছে। এরমাঝে বেশির ভাগই হত্যাকান্ডের ঘটনা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের গত ৩ নভেম্বর একটি তুচ্ছ ঘটনায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় একজন পলস্নী চিকিৎসককে তার বাড়িতে ফেলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ বা মামলা পর্যন্তই থাকে। কার্যত এসব গুরুতর অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে এমন নজির নেই বলে জানান এলাকাবাসী। এলাকাবাসী জানান, সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকার সাধারণ কোনো মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। পাঁচ আগস্টের পর এলাকায় কোনো পুলিশ আসে না। গ্রামে যে পুলিশের ফাঁড়ি করা হয়েছে তা শুধু নামে মাত্র। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কিছু বলে না। নরসিংদীর আর্মি ক্যাম্পে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারাও কোনো আমলে নেয় না।