ভেদরগঞ্জে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় ঝুঁকিতে বৃদ্ধার জীবন
প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শরীয়তপুর সদর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে আক্তার মিজি ও মানিক মিজি নামে দুই হাতুড়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একজন বৃদ্ধাকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই দুই চিকিৎসকের নামে আদালতে মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। উপজেলার সখিপুর থানার আরশিনগর ইউনিয়নে চরফেলিস গ্রামে সামসুরনাহার বেগম (৬৫) নামের বৃদ্ধা ভুল চিকিৎসার শিকার হন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর চরফেলিস এলাকার বাসিন্দা সামসুরনাহার বেগম কাজ করার সময় তার ডান হাত কেটে যায়। তাৎক্ষণিক চরফেলিস বাজারে চিকিৎসকের নিকট যান। তখন রোগীর হাতে ইনজুরি দেখে ডাক্তার আক্তার মিজির ছেলে ডাক্তার মানিক বলেন, 'আপনারা টেনশন কইরেন না, আমরাই সব করে দিতে পারব। হাসপাতালে যেতে হবে না।' পরে ডান হাতের ক্ষত স্থানে প্রায় ৩০টি সেলাই করেন। এক সপ্তাহ বাড়িতে রেখে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে ২০ হাজার টাকা বিল করেছেন ওই দুই চিকিৎসক। তবে এক সপ্তাহ পরে সামসুরনাহারের হাতে ইনফেকশন হয়। তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে চাইলে আক্তার আর ছেলে মানিক বারণ করেন। তারা তাদের পরিচিত চাঁদপুর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান। সেখানে তিন লাখ দশ হাজার টাকা খরচ করে ১৬ দিন চিকিৎসার পরেও হাত ভালো হয়নি। পরে সেখানকার ডাক্তার ঢাকায় পাঠান। ঢাকার মিরপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করেও হাত আর ভালো হয়নি। এখন হাত কেটে ফেলতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার চিকিৎসক।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আরশিনগর ইউনিয়নের চরফেলিস বাজারে আক্তার মিজির একটি ফার্মেসির দোকান রয়েছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা দেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অপচিকিৎসা করে আসছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। তার ছেলে মানিক মিজি উগঝ কোর্স করেন। এ নামে বিএমডিসি স্বীকৃত কোনো চিকিৎসা বিষয়ক ডিগ্রি নেই। বাংলাদেশে কেবল উগঋ ডিগ্রির বিএমডিসি স্বীকৃতি রয়েছে।
মামলার বাদী রোকেয়া বেগম বলেন, 'তাদের ভুল চিকিৎসায় এখন হাত কেটে ফেলতে হবে। আক্তার ও মানিকের বিরুদ্ধে আমি কোর্টে মামলা করেছি। আমরা ক্ষতিপূরণ ও তাদের আইন অনুযায়ী বিচার দাবি করছি।'
অভিযুক্ত আক্তার মিজি ও মানিক মিজি বলেন, 'হাত কেটে রক্তাক্ত অবস্থা আমাদের ফার্মেসিতে আসলে আমরা প্রাথমিকভাবে সেলাই করেছি। পরে বাড়িতে রেখে ওষুধ এন্টিবায়োটিকসহ ডোস দিয়েছিলাম।'
শরীয়তপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, 'ওই বৃদ্ধার হাতের রগ কেটে গিয়েছে। হাতের রগ কাটলে এমবিবিএস সার্জন দ্বারা অপারেশন করাতে হতো। কিন্তু এ কাজ এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া যদি কেউ করে থাকে তাহলে ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আমরা তদন্ত করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন দেব।'