নিম্নমানের রেণু ও তীব্র তাপদাহে খুলনার ডুমুরিয়ায় বাগদা চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। রেণুর মান নিয়ন্ত্রণ, কৃষি আওতায় বিদু্যৎ বিল নেওয়াসহ সরকারি সহায়তা ছাড়া বাগদা চাষে অনীহা প্রকাশ করছেন ঘের মালিকরা।
জানা যায়, ডুমুরিয়াসহ খুলনা জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে সনাতন ও আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়েছে। জেলায় মোট ২ লাখ চাষি রয়েছে। তারমধ্যে গলদা চাষি এক লাখ ২৫ হাজার এবং বাগদা চাষি ৭৫ হাজার। আর ডুমুরিয়া উপজেলায় ৬৫ হাজার চাষির মধ্যে ৩০ হাজার গলদা এবং ৩৫ হাজার বাগদা চিংড়ি চাষি রয়েছে। এরমধ্যে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে খুলনা জেলায় বাগদা চিংড়ি চাষ করছেন ১২৭ জন চাষি। ডুমুরিয়া উপজেলায় রয়েছেন সাতজন চাষি।
ক্লাস্টার পদ্ধতি এবং আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা ও ভেনামি চিংড়ি চাষ মিলে এ বছর ২৫ হাজার মেট্রিকটন চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা খুলনার মৎস্য বিভাগের। কিন্তু অধিকাংশ খামারে পোনার গুণগত মান সঠিক না থাকাসহ এসপিএফ পোনার অভাবে উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। পরিবেশের বিরূপ প্রভাবে অসময় বৃষ্টিপাত, তীব্র তাপদাহ এবং আকাশ বন্যায় বিশেষ করে ডুমুরিয়া অঞ্চলে অনেক চাষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা এবার ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা চিংড়ি উৎপাদনে। এ দিকে মৎস্য চাষ কৃষির একটা অংশ থাকলেও এখানে বিদু্যৎ বিল নেওয়া হচ্ছে শিল্প রেটে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এ সেক্টর দ্বিতীয় হলেও চিংড়ি চাষের উপর সরকারের নেই তেমন সহায়তা। যার কারণে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চাষে অনীহা চাষিদের।
ডুমুরিয়া ও বটিঘাটা এলাকার বাগদা চিংড়ি চাষি প্রফুলস্ন কুমার রায় জানান, 'আমরা প্রত্যেক চাষি বীজের উপর নির্ভর করি। সেই বীজে সঠিক গুণগত মান না থাকায় যেমনটা এবার হয়েছে। শতকরা ৫০% মাছ পাওয়া গেছে এবং তার গড় ওজনও অনেক কম। মাছ ধরা এখনো বাকি আছে। তবে ধারণা করছি লোকসান না হলেও এবার লাভ হবে না। কারণ মাছ কেটে গেলেও খরচ কম নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'চিংড়ি চাষের সম্প্রসারণ বৃদ্ধি, চাষিদের সহায়তা হিসেবে ঋণ দেওয়াসহ নানামুখী সহায়তা দিলে চাষিরা মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনপূর্বক বাংলাদেশ আরও উন্নতি হবে।'
কানাইডাঙ্গা এলাকার বাগদা চাষি অভিজিত বিশ্বাস বলেন, 'বাগদা রেণুতে এবার ধরা খেয়ে গেছি। বটিয়াঘাটার দেশ বাংলা হ্যাচারি থেকে বাগদা রেণু এনে ঘেরে ছেড়ে ছিলাম। কিন্তু এবার মাছের গুণগত মান খুবই খারাপ। যে কারণে অর্ধেক মাছ পাওয়া গেছে। আমার ২৫ শতক একটা পুকুর রয়েছে। যেখানে বাগদা চিংড়ি চাষ করে গত বছর সাড়ে ২৪ মণ বাগদা পেয়েছিলাম। এবার পেয়েছি মাত্র ১৬ মণ। আগামীতে যদি মৎস্য দপ্তর রেণুর মান নিয়ন্ত্রণ করে বা আমাদের সহয়তা দেয় তাহলে বাগদা চাষ করব। না হয় অন্য কিছু করব।' এমন অভিযোগ অধিকাংশ ঘের মালিকদের।
বটিয়াঘাটার গোপালখালী দেশ বাংলা এসপিএফ হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ হাসান পান্না জানান, 'শুনেছি কিছু ঘেরে চিংড়ি মাছের উৎপাদন কম হয়েছে। আমাদের হ্যাচারির রেণু কোনো সমস্যা নয়। তারা হয়তো অন্য হ্যাচারি থেকে নিয়েছে। তাছাড়া খাবার বা পরিচর্যার ত্রম্নটিজনিত কারণে এমনটা হতে পারে।'
জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব কুমার পাল জানান, 'পোনার গুণগত মান সঠিক না থাকায় এবং এসপিএফ পোনার অভাবে কিছু খামারে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। আগামীতে চাষিদের এসপিএফ'র পোনা নিশ্চিত করতে পারলে এবং চাষি যদি পুকুরে আধুনিক চাষের ব্যবস্থাপনা করতে পারে তাহলে চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।'