শীতকালীন বিভিন্ন সবজিতে ভরে উঠেছে সিরাজগঞ্জের যমুনার চর এলাকা। এদিকে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে খুশি চর এলাকার কৃষকরা। অন্যদিকে, মেহেরপুরে এবার শীতকালীন সবজি শিম চাষ করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করছেন স্থানীয় চাষিরা। তাই চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলের শিমচাষিদের পোয়বারো। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
সিরাজগঞ্জ থেকে এইচএম মোকাদ্দেস জানিয়েছেন, যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বিস্তীর্ণ চর ভরে উঠেছে সবুজে। চরজুড়ে এখন বেগুন, মুলা, পালংশাক, শিম, মিষ্টি কুমড়া, শসা, লাউ, টমেটো, লাল শাক, বরবটি ও শসাসহ নানা ফসলের সমারোহ। সবজি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা। এ বছর ব্যাপক বন্যার পরও শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
'সবজি গ্রাম' নামে খ্যাত উপজেলার ধুপুলিয়াচর, বাউশা চর, উমারপুর ইউনিয়নের বিস্তৃীর্ণ চরভূমি ভরে উঠেছে সবুজ সবজিতে। মিনিদিয়া চরের কৃষক সামাদ মিয়া, ধুপুলিয়া গ্রামের মকছেদ আলী, সুলতান মিয়া, বাউশা গ্রামের আলিম ও সবুজ বলেন, এবার শীতকালীন সবজির দাম অনেক বেশি হওয়ায় গত বন্যায় ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ৮-১০ হাজার টাকা খরচ করে লক্ষাধিক টাকার সবজি বিক্রি করছেন চাষিরা।
চৌহালী উপজেলা (অতিরিক্ত) কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ সাব্বির আহমেদ সিফাত বলেন, এ বছর উপজেলায় বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আগাম সবজি চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। আর সঠিক সময় কৃষক পর্যায়ে সার এবং বীজের সন্তোষজনক সরবরাহ থাকায় লাভবান হচ্ছেন তারা। বাজারদর ভালো থাকায় উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা। এবার উপজেলায় ৭০ হেক্টর শাকসবজির চাষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, মেহেরপুর প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা জানান, সবজিখ্যাত জেলা মেহেরপুরে অন্য সবজির সঙ্গে ব্যাপকহারে আগাম শীতকালীন শিম চাষ হয়ে থাকে। তবে এ বছর শিম চাষিদের পোয়াবারো। দাম ও ফলন দুটোই চাষিদের অনুকূলে। প্রথম দিকে বৈরী আবহাওয়ায় গাছের কিছুটা ক্ষতি হলেও শীত পড়তে শুরু হওয়ায় এবং কৃষকের সঠিক পরিচর্যার কারণে শিমের ভালো ফলন হচ্ছে। বর্তমানে অন্য সবজির চেয়ে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। দাম ও উৎপাদন ভালো থাকায় এবার এই শিমে বিঘা প্রতি লক্ষাধিক টাকা ঘরে আসবে বলে আশা চাষিদের।
কৃষি বিভাগের হিসেবে এবার জেলায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম শিম চাষ হয়েছে। মেহেরপুর জেলার চাষিদের কাছে অর্থকরী ফসল এই শিম চাষ। প্রতিবছর শীত আসার আগেই আগাম শিমের চাষ করে আসছেন চাষিরা। এ সময় সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভালো দামে বিক্রি হয় সব ধরনের সবজি। বিগত বছরগুলোতে শুধু শিম চাষ করে অনেক চাষি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন। অন্যান্য প্রায় সব সবজির চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি শিম ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিঘাপ্রতি শিম চাষে চাষিদের খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা ঘরে উঠবে বলে আশা করছেন তারা। সদর উপজেলার কাঁঠলপোতা গ্রামের শিমচাষি আমিরুল ইসলাম জানান, তার এবার দুই বিঘা শিমের আবাদ আছে। ইতোমধ্যে জমি থেকে ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। সামনে এখনো দুই মাস শিম বিক্রি করবেন, যা থেকে আরও দেড় লাখ টাকার শিম বিক্রির আশা করছেন।
একই গ্রামের শিমচাষি আজিবর জানান, প্রথম যখন শিম ওঠা শুরু হয় তখন ২০০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে শিম উৎপাদন হচ্ছে। ফলে দাম কমে গেছে। তবে বর্তমান বাজার দাম ৫০ টাকা কেজি হলেও চাষিরা লাভবান হবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, শীতকালীন আগাম শিম চাষ মেহেরপুর জেলায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। জেলায় বিস্কুট জাতের শিম চাষ বেশি হয়ে থাকে। চাষিদের পরিমিত কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে শিম চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ সময় সবজির দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় আগামীতে শিম চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।