বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

রসিকের উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল হওয়ায় নগরবাসী হতাশ

আবেদুল হাফিজ, রংপুর
  ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রসিকের উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল হওয়ায় নগরবাসী হতাশ

রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) আয়তন ২০৫ বর্গকিলোমিটারের বেশি। ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশ এলাকার মানুষ নাগরীক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তা-ঘাট। এরপরও সরকারি অর্থ বরাদ্দ অপ্রতুল। এভাবেই হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে এমন অবহেলার শিকার হয়েছে। উন্নয়ন বঞ্চিত নতুন ওয়ার্ডগুলো এখনো গ্রামীণ পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারের আমলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রসিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ে এক হাজার ৬৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) তালিকায় না রেখে যাচাই-বাছাইয়ে তাও ঝেড়ে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে হতাশ নগরবাসী। বর্তমান রসিক প্রশাসক ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

রসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। ৩৩টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এই সিটির আয়তন রয়েছে ২০৫ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার। ১১২টি মৌজায় মহলস্না রয়েছে ৪৪২টি। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এর আগে প্রায় দেড়শ' বছরের প্রাচীন ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত ৫২ বর্গকিলোমিটারের এই পৌরসভাকে বিলুপ্ত করা হয়।

নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রংপুর সিটি করপোরেশনে প্রথম মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রয়াত শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টি মনোনীত মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

রসিক অফিস সূত্র জানিয়েছে, তিন দফায় নির্বাচিত মেয়র ২০১৫ অর্থবছর থেকে ২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সিটি গভার্ন্যান্স, মিউসিপ্যাল গভার্ন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (এমজিএসপি), রসিকের রাস্তা উন্নয়ন এবং ড্রেন ও ফুটপথ নির্মাণ, রসিকের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন, রসিকের বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও মেরামতকরণ এবং রসিকের ৩৩টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন রাস্তায় সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পের আওতায় কাজ হয়েছে। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৯১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন সবচেয়ে কম। সরকারি অর্থ ব্যয় হয় মাত্র ১০ শতাংশ। এসব প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে জাইকা, ওয়াল্ড ব্যাংক, আরপিসি, ভারতীয় এবং সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে। তবে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত মেয়রের সময় ২১০ কোটি টাকা সরকারি অনুদান দেওয়া হলেও তৃতীয় দফায় নির্বাচিত মেয়রের সময় কোনো সরকারিভাবে রসিকে কোনো অনুদান দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও এডিপি থেকে বরাদ্দ ও সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিলের মা্যধমে ১৮০ কোটি টাকার কাজ বাস্তাবায়ন করা হয়েছে।

সূত্র মতে, রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রায় ২০৬ বর্গ কিলোমিটারের ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট রাস্তার পরিমাণ এক হাজার ৪২৭ দশমিক ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে কাঁচা রাস্তা ৯৬৪ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার, পাকা রাস্তা ৪০৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার, সোলিং রাস্তা ৫৬ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার রয়েছে। পাকা ড্রেন ১৫৩ দশমিক ৫২ কিলোমিটার, ব্রিজ ১২৫টি, কালর্ভাট এক হাজার ১১৫টি রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং ৪১৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, আরসিসি রাস্তা ৪৫ দশমিক ১৯ কিলোমিটার, রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ২৩২ দশমিক ২৯ কিলোমিটার, আরসিসি ড্রেন ১৭২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার নির্মাণ হয়েছে। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র প্রার্থী শফিয়ার রহমান জানান, 'রংপুর বরাবরই অবহেলিত, এখনো তা আছে। বিগত সরকারপ্রধানরা যা করেছে, বতর্মান সরকার তাই করছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, রংপুর এক নম্বর জেলা করা হবে। কিন্তু এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।' রসিকের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাতিল হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্ব্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজম আলী জানান, এক হাজার ৬৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। একনেকে ওঠার আগেই তা বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে নগরী উন্নয়নে প্রকল্প আর থাকল না। ফলে চলতি অর্থবছরে নগরী উন্নয়ন বঞ্চিত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে