শরীয়তপুরের ভেদেরগঞ্জে ভোটার আইডি কার্ডে ১০ বছর বাড়িয়ে নতুন এনআইডি কার্ড করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মচারী আবুল হাসেম মাঝি। ওই ব্যক্তির দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। একটি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নেন, আরেকটি দিয়ে নেন সরকারি ব্যাংকের পেনশন ভাতা। দুটি এনআইডিতে জন্মতারিখ ও মাস একরকম থাকলেও সালে রয়েছে বড় ধরনের গড়মিল। তবে এ সম্পর্কিত অভিযোগ এবং পত্রিকায় খবর প্রকাশের পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, আবুল হাসেম মাঝির দুই এনআইডির মধ্যে বয়সের পার্থক্য দশ বছর। তবে আইনে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যে কোনো মুক্তিযোদ্ধার বয়স কমপক্ষে সাড়ে ১২ বছর হওয়ার কথা থাকলেও তার বয়স আট বছর ১১ মাস ২৮ দিন ছিল। যেখানে শিশু বয়সে যার হাতে বই খাতা কিংবা মায়ের চাদরে থাকার কথা, কিন্তু আট বছর বয়সে তিনি অস্ত্র হাতে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় ও অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে।
অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের রেজিস্ট্রেশন সার্চ করে দেখা যায়, আবুল হাসেম মাঝির একটি বেসামরিক গেজেট (১৩৩৭) নম্বর ছাড়া লাল মুক্তিবার্তা কার্ড অথবা ভারতীয় তালিকায় তার নাম নেই। অথচ অন্য মুক্তিযোদ্ধার অন্তত একটি ডকুমেন্টস হলেও রয়েছে। আবুল হাসেম মাঝির প্রকৃতভাবে ১৮২৮ সালে তৈরি ২ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে জন্ম তারিখের এনআইডি (নম্বর ২৮৪১৭৮৩১৬৬) দিয়ে তিনি রূপালি ব্যাংকে ব্যবহার করেন। আর মুক্তিযোদ্ধা হতে বয়স ১০ বছর বাড়িয়ে সেখানে জন্মতারিখ ১৯৫৩ সালের ২ জানুয়ারি। এনআইডি নম্বর ৩৭৫৭৯০০৭২০। এটি দিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, তুলছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেওয়া বীর নিবাসও। ভেদরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মান্নান রাড়ী বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা ভারতীয় লিস্টে আবুল হাসেম মাঝির নাম আছে কিনা, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। কোনো মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় পরিচয়পত্রে সাড়ে ১২ বছর না হলে তাকে আইন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম আসার কথা না। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।'
আবুল হাসেম মাঝি বলেন, 'আমার এনআইডি কার্ড দুটি। মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে টিকতে ২০০৮ সালে আরেকটা কার্ড করেছি। আমাকে বেসরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমার ছেলে আমার এনআইডি কার্ড করে দিয়েছে। তবে লালমুক্তি বার্তার কার্ড আমার হাতে নেই। সমন্বিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আমার নাম রয়েছে। আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।'
জেলা নির্বাচন অফিসার আবদুল মান্নান বলেন, 'আবুল হাসেম মাঝি দুটি এন আইডি কার্ড করেছেন। কীভাবে করেছেন, আমাদের জানা নেই। তাই নির্বাচন কমিশন থেকে একজন পরিচালক প্রদান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'