আমন ক্ষেতে ইঁদুর ও মাজরা পোকার উৎপাত, দিশেহারা কৃষক

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
বিভিন্ন এলাকায় আমন ক্ষেতে এবার বৃদ্ধি পেয়েছে ইঁদুর ও মাজরা পোকার উৎপাত। এ কারণে ফসলহানির আশঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, খুলনার দাকোপের কৃষকদের প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় ইঁদুর ও মাজরা পোকার সঙ্গে। চলতি মৌসুমে আমন ধান ক্ষেতে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি রাতে ইঁদুরও ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। পোকা দমনে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের কিটনাশন স্প্রে এবং ইঁদুর দমনে বিষ বা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে আমন চাষে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গত বছরের মতো এবারও মোট ১৯ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উপশি ১৭ হাজার ১৮৫ হেক্টর, স্থানীয় জাত ১ হাজার ৯৮০ হেক্টর ও হাইব্রিড ২০০ হেক্টর। বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব এলাকায় ব্যাপকভাবে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ইঁদুরের উৎপাতও বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনে ইঁদুরগুলো গাছে বা মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে। আর রাতে ধান গাছ কেটে সাবাড় করে। ফলে ধান গাছ শুকিয়ে লাল হয়ে মারা যাচ্ছে। এদিকে, অতিবৃষ্টির কারণে ধান ক্ষেতে পোকার উপদ্রব বেড়েছে বলে কৃষকরা মনে করেন। পোকার আক্রমণ থেকে ধানক্ষেত রক্ষায় বারবার বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করছেন। আবার ইঁদুর দমনে বিষ বা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেও ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। ফলে আমন চাষে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আর আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলার আনন্দনগর এলাকার কৃষক গোপাল গোলদার বলেন, এ বছর তিনি ৪৫ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। কিন্তু প্রায় ৩ বিঘার মতো জমির ধান গাছ ইঁদুর কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। ফলন আসার মুহূর্তে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ এবং ইঁদুরের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছেন। মাজরা পোকার থেকেও বেশি ক্ষতি করছে ইঁদুর। ইঁদুর দমনে বিভিন্ন ধরনের বিষ ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। চুনকুড়ি এলাকার কৃষক জীবননান্দ মন্ডল জানান, অতিবৃষ্টির কারণে আমন ফসলে মাজরা, লেদা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ বেড়েছে। বিগত বছরগুলোতে একবার কীটনাশক স্প্রে করলেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হতো। আর এ বছর তিন থেকে চারবার কীটনাশক স্প্রে করেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে ফসল ঘরে উঠবে। এ বছর এমনিতেই দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যাপক খরচ হয়েছে। তারপর পোকার আক্রমণ ও ইঁদুরের উৎপাত থেকে ফসল রক্ষায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বানিশান্তা, কামারখোলা, গুনারী, কামনিবাসিয়া ও বটবুনিয়া এলাকার আরও একাধিক কৃষক একই অভিমত ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ইঁদুর ১৯৩ হেক্টর জমির ধান গাছ কেটে নষ্ট করেছে। আর মাজরাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণও বেড়েছে। তবে এসব পোকা ধানের তেমন ক্ষতি করে না। এসব পোকা ও ইঁদুর দমনে প্রত্যেক ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের জন্য ভ্রাম্যমাণ কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র চালু করেছেন। তা ছাড়া প্রত্যেক দোকানে পর্যাপ্ত কীটনাশক রাখার পরামর্শ ও কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা চলছে। ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, ভূঞাপুরে পাকা ধানে ইঁদুরের আক্রমণে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। কীটনাশকেও দমন হচ্ছে না ইঁদুর। আমন ধানে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। কৃষকের পাকা ধান কেটে সাবাড় করছে ইঁদুরের দল। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন ভূঞাপুরের কৃষকরা। ইঁদুর দমনে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। কৃষকদের অভিযোগ, ইঁদুর দমনে মাঠ পর্যায়ে কৃষি সংশ্লিষ্টদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কৃষকরা অনেকটা বাধ্য হয়ে সনাতন পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। কেউ ধান ক্ষেতে ব্যবহার করছেন কলাগাছ, কেউ বিভিন্ন তাবিজ-কবজ সুতায় বেঁধে জমিতে ঝুলিয়ে রাখছেন, কেউ ইঁদুর তাড়াতে ধানের জমিতে সুতা বা রশির মাধ্যমে আস্তানা করে বাজাচ্ছেন বাদ্যযন্ত্র আবার কেউ বা জমিতে বাঁশের কঞ্চিতে পলিথিন বেঁধেছেন। সম্প্রতি 'ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক ভাই, ইঁদুর দমনে সহযোগিতা চাই'- এ প্রতিপাদ্যে জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ইঁদুর নিধন অভিযান উদ্বোধন করা হয়। কৃষি বিভাগ বলছে, ধান ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিরোধে তারা মাঠে কাজ করছেন এবং কৃষকদের নানা রকম পরামর্শ দিয়ে আসছেন। উপজেলার রুহুলী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকা ধান ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে। হাট-বাজার থেকে বিভিন্ন কীটনাশক দিয়ে ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। তাই ক্ষেতে পথিলিন সাঁটিয়েছেন, যদি কিছু কাজ হয়। কয়েড়া গ্রামের কৃষক রাশেদ আলী বলেন, একদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এখন ইঁদুরের আক্রমণের শিকার। ২৫ শতাংশ জমির ২-৩ শতাংশ কেটে নষ্ট করে ফেলছে। ইঁদুরের আক্রমণ বন্ধ করতে ধান ক্ষেতে অনেক কিছু করেও কাজ হচ্ছে না। এদিকে, এমন সময়ে ইঁদুর দমনে সঠিক পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগের কাউকে পাচ্ছেন না। টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। আমন মৌসুমে ধান ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেয়। তাই ইঁদুর দমনে কৃষকদের পরামর্শ ছাড়াও ইঁদুর নিধনেও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।