চেম্বারকে মিনি হাসপাতাল বানিয়ে চলছে পলস্নী চিকিৎসকের বাণিজ্য

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
এমবিবিএস ডাক্তারের ধারে কাছেও নেই তিনি। হাসপাতাল স্থাপনের নিয়ম-নীতি সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। অন্যদিকে চেম্বারে একাধিক শয্যা স্থাপন করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের দিচ্ছেন চিকিৎসা। নিজের মতো করে চেম্বারকে মিনি হাসপাতাল বানিয়ে চলছে রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য। যার থেকে যেমন ইচ্ছা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ। এমনই এক পলস্নী চিকিৎসকের সন্ধান মিলেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। যিনি একজন পলস্নী চিকিৎসক হয়ে নিজের মতো করে চেম্বারে খুলে বসেছেন মিনি হাসপাতাল বানিয়ে। এ পলস্নী চিকিৎসকের নাম মো. এহসান হাবীব। ডিএমএফ এন্ড বিএইচএস ডিগ্রিধারী পলস্নী চিকিৎসক হয়েও চেম্বারে রীতিমতো মিনি হাসপাতাল খুলে বসেছেন তিনি। একজন পলস্নী চিকিৎসক হয়েও উচ্চতর ডিগ্রিধারী ডাক্তারের বেশ ধরে জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করছেন। এ ছাড়াও চেম্বারে ১০টি শয্যা স্থাপন করে রোগী ভর্তি রাখেন। এতে একদিকে চিকিৎসার নামে তিনি গ্রামের সাধারণ রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। আর অন্যদিকে চিকিৎসা নিতে এসে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই সাতকানিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঠাকুর দিঘির পাড়ের মসজিদ মার্কেটে ১০টি শয্যা স্থাপন করে আন-নুর সেবা সেন্টার নামে একটি চেম্বার খুলে দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখছেন এহসান হাবীব। অথচ তিনি শুধুমাত্র পলস্নী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে পারেন। এমবিবিএস ডাক্তার না হলেও ঠিকই ডাক্তার পদবি ব্যবহার করছেন। তার প্রেসক্রিপশন প্যাডে ডিএমএফ এন্ড বিএইচএস ডিগ্রির পাশাপাশি এমসিএইচ (ঢাকা শিশু হাসপাতাল), এক্সপিটি (কুমিলস্না সদর হাসপাতাল) ও কুমিলস্না জেলার নাঙ্গলকোট আধুনিক হাসপাতালের প্রাক্তন সহকারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। এছাড়াও প্রেসক্রিপশন প্যাডে তিনি মেডিসিন, মানসিক, বাত-ব্যথা, মা ও শিশু, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, এলার্জি, চর্ম ও যৌন রোগে অভিজ্ঞ হিসেবে উলেস্নখ করেন। এদিকে নাঙ্গলকোট আধুনিক হাসপাতালের প্রাক্তন সহকারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে আগে কর্মরত ছিলেন দাবি করে প্রেসক্রিপশন প্যাডে উলেস্নখ করলেও বর্তমানে কুমিলস্না জেলায় ওই নামে কোনো হাসপাতাল নেই বলে তিনি স্বীকার করেন। স্থানীয় তানজিনা আকতার নামে এক নারী বলেন, 'কিছুদিন আগে আমার এক নিকটাত্মীয় এহসান ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। তখন এহসান ডাক্তার তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৬টি ইনজেকশন পুশ করতে বলেন। আমার ওই নিকটাত্মীয় ১ হাজার ২০০ টাকা মূল্যে এহসান ডাক্তারের কাছ থেকে ৫টি ইনজেকশন পুশ করেন। শেষ ইনজেকশনটি নেওয়ার দিন এহসান ডাক্তার চেম্বারে ছিলেন না। তাই আমার ওই নিকটাত্মীয় একটি ফার্মেসিতে ইনজেকশন পুশ করার জন্য গেলে দেখতে পান ওই ইনজেকশনটির দাম মাত্র ৩০০ টাকা। ওই ডাক্তার এভাবে প্রতিনিয়ত সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।' ডাক্তারি পেশায় আপনার কি কি ডিগ্রি রয়েছে যে আপনি এতগুলো রোগে অভিজ্ঞ- প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার কোনো ডিগ্রি নেই। আমি আকাশ থেকে উড়ে এসে মানুষকে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছি।' সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কেএম আবদুলস্নাহ আল মামুন বলেন, 'কোনো পলস্নী চিকিৎসকের চেম্বারে একাধিক শয্যা স্থাপন করে রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার নিয়ম নেই। এ বিষয়ে ইউএনও'র সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রম্নত আইনগত ব্যবস্থা নেব।' সাতকানিয়া ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, 'এ বিষয়ে আমার জানা ছিল না। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এ বিষয়ে বেশ কিছু ডকুমেন্টসহ একটি অভিযোগ পেয়েছি। শিগগিরই ওই পলস্নী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'