কোটা আন্দোলনে নিহত ইয়াছিনকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার
প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রূপসা (খুলনা) প্রতিনিধি
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় রাজধানীতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন খুলনার ইয়াছিন (১৭)। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পরিবারের লোকজন এখন দিশেহারা। ঘটনার প্রায় ৪ মাস পার হলেও ইয়াছিনের পরিবারের কান্না থামেনি।
'অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র ছেলেকে বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। তা আর হলো না। এই পৃথিবীতে থেকে লাভ কি। কাকে নিয়ে থাকব। আলস্নাহ আমাকে এত বড় আঘাত দিল কেন- যা আমি সইতে পারছি না।'
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ সব কথা বলেন কোটা আন্দোলনে নিহত ইয়াছিনের মা মনজিলা বেগম। খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের রহিমনগর গ্রামে তার ভাড়া বাড়িতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। গত ২১ জুলাই কোটা বিরোধীদের সংঘর্ষে রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকায় কাজ শেষ করে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয় ইয়াছিন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ জুলাই মারা যায় সে। পরদিন ২৬ জুলাই বুকের ভেতর গুলি রেখেই ময়নাতদন্ত শেষে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে তার গ্রামের বাড়ি কবরস্থানে মরদেহ দাফন করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত ইয়াছিন খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের রহিমনগর গ্রামের মৃত নুর ইসলাম শেখের ছেলে। সে মা মনজিলা বেগমের সঙ্গে যাত্রাবাড়ী এলাকায় বসবাস করত। ঢাকার একটি গ?্যাসের দোকানের কর্মচারী ছিল। এদিকে ইয়াছিনের মৃতু্যর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃতু্যর চার মাস পার হয়ে গেলেও খোঁজখবর নিতে এখনো কেউ তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি।
নিহতের নানী মোমেনা বেগম বলেন, 'ইয়াছিনের বয়স যখন ১৮ মাস তখন ওর বাবা মারা যায়। পরে আমি ওকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। তিন বোনের এক ভাই ছিল সে। ঢাকা শহরের গোলাগুলির খবর পেয়ে ফোন করে বলেছিলাম সাবধান থাকতে। পরে খবর পেলাম ওর বুকে গুলি লাগে এবং ৫ দিন পরে মারা যায়। ছেলের মৃতু্যর শোকে ওর মাও এখন অসুস্থ। রহিমনগরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও নিজেদের কোনো জমি নাই।'
নিহত ইয়াছিনের মা মনজিলা বেগম বলেন, 'পিতা হারা একমাত্র ছেলেকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীতে থাকতাম। ২১ জুলাই কয়েকজন জানায় ইয়াছিনের গায়ে গুলি লেগেছে। আমি ছুটে গিয়ে দেখতে পাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। ধার করে টাকা দিয়ে ওকে চিকিৎসা করাই। চিকিৎসা করিয়ে ওকে বাঁচাতে পারলাম না। কোথা থেকে গুলি এসে বাবার বুকটা ঝাঁঝরা হয়ে দিল। আমি কাকে নিয়ে বাঁচব।'