বোয়ালমারীতে দেউলিয়া মিলের পাশেই নতুন জুটমিল!

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সাড়ে ৩শ' কোটি টাকা ঋণ খেলাপির দায়ে অ্যানোনটেক্স গ্রম্নপের মালিকানাধীন গোল্ডেন জুটমিলটি দেউলিয়া হয়ে নিলামে উঠেছে। পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডার আহ্বান করেছে জনতা ব্যাংকের ঢাকা করপোরেট শাখা। গত শুক্রবার জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখায় টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষদিন বিকাল ৩টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা ছিল। এদিকে, দেউলিয়া হওয়া গোল্ডেন জুটমিলের পাশে 'বোনানজা জুটমিল' নামে আরেকটি জুট মিল স্থাপন করে সেটি পরিচালনা করছেন দেউলিয়া হওয়া মিলের কর্মকর্তারাই। নিলাম বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৫৫ কোটি ছয় লাখ দুই হাজার ৯৬৮ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকের টাকা লুটপাট করার পর মিলটিকে দেউলিয়া করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। এদিকে গোল্ডেন জুটমিলের লোন সম্পর্কে জনতা ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখা কোনো তথ্য দিতে পারেনি। দেউলিয়া হওয়া জুটমিল সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাতের শ্বশুর বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসদরের ছোলনা গ্রামে। চেয়ারম্যানের সঙ্গে অ্যানোনটেক্স গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদলের সুসম্পর্ক থাকায় জনতা ব্যাংকের ঢাকাস্থ করপোরেট শাখা থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়। মিলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ড. আবুল বারাকাতের স্ত্রী শাহিদা পারভিনের বড় ভাই মিজানুর রহমান গোল্ডেন জুটমিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর মিজানুর রহমানের বড় ছেলে মহসিন হোসেন ওরফে গুড্ডু মিলটির পরিচালক। তারাই দেউলিয়া হওয়া মিলের পাশে আরেকটি মিল স্থাপন করে পরিচালনা করছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার বোয়ালমারী পৌরসভার শেষ প্রান্তে কলারন এলাকায় ২০১০ সালে প্রায় ১৬ একর জমির উপর 'এম এইচ গোল্ডেন জুট মিল' নামের মিলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের শুরুতে মিলটিতে উৎপাদন শুরু হয়। তৎকালীন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাতের শ্বশুর বাড়ির লোকজন মিলটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও মালিকানা ঢাকার টঙ্গীর অ্যানোনটেক্স গ্রম্নপের। অ্যানোনটেক্স গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদলের নামে জনতা ব্যাংকের ঢাকাস্থ করপোরেট শাখা থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়। ইউনুস বাদল ড. আবুল বারাকাতের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইউনুস বাদল ও তার ভাই ইউসুফ বাদল জার্মানিতে পালিয়ে গেছেন বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। মিলটি উৎপাদন শুরুর পর থেকে ব্যাংকের ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি মিল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, 'এম এইচ গোল্ডেন জুট মিল'র সব যন্ত্রপাতি খুলে 'বোনানজা জুটমিলে' সেটিং করা হয়েছে। গোল্ডেন জুটমিলের নামে গৃহীত ঋণের কোনো কিস্তি এবং সুদ পরিশোধ না করায় মিলটি খেলাপি হয়ে দেউলিয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক নীলাদ্রি ঘোষ বলেন, 'গোল্ডেন জুট মিলটির নামে ঋণ মঞ্জুর করা হয় ঢাকার জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে। এ কার্যক্রমের কোনো কিছুই আমরা জানি না। মিলটির লোন সম্পর্কে বোয়ালমারী শাখায় কোনো তথ্যও নেই।' গোল্ডেন জুটমিলের প্রশাসন বিভাগের ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল মান্নান জানান, 'গোল্ডেন জুট মিল অ্যানোনটেক্স গ্রম্নপের একটি প্রতিষ্ঠান। অ্যানোনটেক্স গ্রম্নপের নামে ঋণ নেওয়া হয়। নরসিংদির ইউনুস বাদল, ইউসুফ বাদল অ্যানোনটেক্স গ্রম্নপের মালিক। তারা ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করায় এম এইচ গোল্ডেন জুটমিল ঋণখেলাপি হয়।' কোনো মিলই বর্তমানে লাভে নেই বলে তিনি দাবি করেন। গোল্ডেন জুটমিলের যন্ত্রপাতি খুলে বোনানজা মিলে লাগানোর বিষয়টি অস্বীকার করে আব্দুল মান্নান বলেন, 'এটা আমাদের সম্পদ। এটি কোন সরকারি সম্পদ নয়।' সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এম এইচ গোল্ডেন জুট মিলটির পরিচালনাকারী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীই এখন পাশে নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া 'বোনানজা জুট মিলে' বসেন। এ সময় জুটমিলের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, 'গোল্ডেন জুটমিলে আমরা সবাই চাকরি করতাম। মিলটি খেলাপি হয়ে যাওয়ায় আমরা সেটি ছেড়ে দিয়েছি।' এম এইচ গোল্ডেন জুটমিলের পরিচালক ও বর্তমান বোনানজা জুটমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মহসিন হোসেন গুড্ডুর সঙ্গে কথা বলতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।