বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

তিতাসে লতিকচু চাষ ও চারা উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে

বগুড়া ও আটঘরিয়ায় আশা জাগাচ্ছে নতুন জাতের মিষ্টি আলু
স্বদেশ ডেস্ক
  ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
তিতাসে লতিকচু চাষ ও চারা উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে
কুমিলস্নার তিতাসে চাষ করা লতিকচু -যাযাদি

লাভবান হওয়ায় কুমিলস্নার তিতাসে কৃষকদের মধ্যে লতিকচু চাষ ও চারা উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে। এদিকে বগুড়া ও পাবনার আটঘরিয়ায় স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন জাতের মিষ্টি আলু। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, কুমিলস্নার তিতাসে লতিকচু চাষ ও চারা উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। কচুর চারা উৎপাদন এবং লতি ও কান্ড বিক্রি করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন।

জানা যায়, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কন্দাল ফসলের পুষ্টিগুণ ও উচ্চমূল্য বিবেচনায় লতিকচু, পানিকচু ও মুখীকচু চাষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলায় ২০১৯ সাল হতে লতিকচু, পানিকচুসহ গোল আলু ও মিষ্টি আলুর প্রদর্শনী দিয়ে আসছে। এর আগে লতিকচু চাষে কৃষকের তেমন আগ্রহ ছিল না। অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ায় পর্যায়ক্রমে কৃষক কচু চাষের প্রতি আগ্রহ হচ্ছেন। বিভিন্ন জাতের কচুর জাত থাকলেও এলাকায় লতিরাজ জাতের কচু ভালো উৎপাদন হয়। লতিকচু ও পানিকচুর প্রদর্শনী, মাঠদিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ বরাদ্দ আসলে আগ্রহী কৃষকদের আধুনিক মাল্টিমিডিয়ায় ভিডিও এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের নাগেরচর গ্রামের প্রবাস ফেরত ফারুক মিয়ার জানান, 'কচু চাষে আগ্রহী হওয়ায় এবার কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিস ২০ শতক জমিতে লতিকচুর প্রদর্শনী দেয়। প্রকল্প থেকে তিন হাজার চারা, প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকও সরবরাহ করে। পরে আমি আরও ৩০ শতক জমিতে লতিকচু ও পানিকচু আবাদ করি। চারা রোপণের দুই মাস পর থেকে লতি বিক্রি শুরু করি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার টাকার লতি এবং ১০ হাজার টাকার কচু বিক্রি করেছি। আশা করি সর্বশেষ পর্যন্ত লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করতে পারব।'

একই গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, 'আমি এবার ১৬ শতক জমিতে লতিকচু চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা ও পরামর্শ পাওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার টাকা বিক্রি এসেছে। আমার দেখাদেখি গ্রামের অনেকেই এবার কচু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছে।'

কালাইগোবিন্দপুর বস্নকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ বলেন, কচু একটি অধিক লাভজনক ফসল। এর পাতা, কান্ড, লতির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এটি দেশের চাহিদার পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা যায়। আমার বস্নকে গত ৩-৪ বছর ধরে একাধিক কৃষক কচু চাষ করে আসছে। অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় এ চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আব্দুলস্নাহ মোস্তাফিন বলেন, এলাকার কৃষকদের মধ্যে কচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে। উপজেলার নাগেরচর গ্রামের ফারুক মিয়া ও আব্দুর রহমান কচু চাষে সফলতা পাওয়ায় গ্রামের প্রায় ১০ জন কৃষক এ কচু চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কচু একটি লাভজনক ফসল। এ ফসল উৎপাদনে কৃষি অফিস থেকে সর্বত্র সহযোগিতা করা হচ্ছে।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, পচে যাওয়া একটি ছোট্ট মিষ্টি আলুর অংশ বাড়ির ছাদের একটি ড্রামে লাগালে সারে ৪ মাসেই একটি আলুর ওজন হয়েছে ৩ কেজি।

বগুড়া শহরের কাটনার পাড়া এলাকার নিরঞ্জন পোদ্দারের শিশুপুত্র মানবীর পোদ্দার। সে পড়ালেখা করে শহরের ভাইবোন স্কুলের কেজি শ্রেণিতে। গত কয়েক মাস আগে সিরাজগঞ্জে বাবা-মার সঙ্গে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। ওই সময় সেখান থেকে খাবার জন্য কিছু আলু দেয় মানবীর পোদ্দারকে। আলুগুলো বাসায় এনে রান্না করলেও ছোট্ট একটি আলু থেকে যায় রান্নাঘরের কোনায়। এক পর্যায়ে আলুটিতে পচন ধরে। কিন্তু এক পাশে ছোট্ট একটি চাড়াও গজায়। এ কারণে আগ্রহী হয়ে মানবীরের মা বন্দনা পোদ্দার ছেলেকে নিয়ে বাসার ছাদের একটি ড্রাম টবে কিছু মাটি দিয়ে চারাটি রোপণ করেন।

কিছুদিনের মধ্যেই চাড়াটি বেশ সুস্থ ও সবল হয়ে ওঠে। এ কারণে মা বন্দনা পোদ্দার ও পুত্র মানবীর পোদ্দার প্রতিনিয়ত যত্ন ও পরিচর্যা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে মিষ্টি আলুর গাছটি এই টবের পাশের অন্য একটি টবে লাগানো বেদানার গাছের সঙ্গে উপরে উঠে যায়। প্রায় ৫ ফিট পরিমাণ বেদানার গাছটি জড়িয়ে ফেলে। গাছটি বেশ লতাপাতায় পরিপূর্ণ হওয়ায় একদিকে যেমন উপড়ে ফেলতে ইচ্ছা ছিল না বন্দনা পোদ্দারের অন্যদিকে বেদানা গাছটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য মিষ্টি আলুর গাছটি তুলে ফেলাও অতিব জরুরি হয়ে পরে। এরই মধ্যে নবান্ন উৎসব ঘিরে মানবীর পোদ্দার মিষ্টি আলু তুলবার জন্য বায়না ধরে মায়ের কাছে। সে অনুযায়ী গাছটি উপড়ে ফেলে আলুটি উঠানোর জন্য চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ড্রাম থেকে মাটিগুলো বের করলে দেখতে পান মস্তবড় একটি আলু। পরে ওজন করে দেখেন আলুটির ওজন ৩ কেজির অধিক। এ বিষয়ে বন্দনা পোদ্দার বলেন, যত্নের মাধ্যমে যেকোনো ইচ্ছাকেই পরিপূর্ণতা দেওয়া সম্ভব। একটি ছোট্ট পচা আলু থেকে যখন তিন কেজি ওজনের একটি মিষ্টি আলু তৈরি সম্ভব, তেমনি পরিচর্যা ও যত্নের মাধ্যমেই অবহেলার কোনো জিনিসকে পছন্দের তৈরি করা সম্ভব।

আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, নতুন জাতের মিষ্টি আলু আবাদ করে আটঘরিয়ার চাঁদভা ইউনিয়নের নাগদাহ গ্রামের নার্সারি মালিক নুর মোহাম্মদ লাভবান হয়েছেন। মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি আলু আবাদ করে ২৫ হাজার টাকা খরচের বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৪৫ মণ মিষ্টি আলু, যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা।

কৃষক নুর মোহাম্মদ জানান, 'উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এই নতুন জাতের মিষ্টি আলু মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে আবাদ করি। খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা, প্রায় ৪৫ মণ আলু উৎপাদন করে বাজার মূল্যে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করি। এ আলুর ডাইন কাটিং হিসেবে আশপাশের কৃষকদের কাছে বিক্রি করে আরও লক্ষাধিক টাকা আয় হয়।'

অন্যদিকে মিষ্টি আলু বিক্রি করে খরচ বাদে আয় করেন প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। এ কারণে তিনি আরও ৪০ শতাংশ জমিতে এই মিষ্টি আলু আবাদের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাকে দেখে আশপাশের কৃষকরা এই নতুন জাতের আলু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ জানান, বর্তমানে বিভিন্ন জাতের মিষ্টি আলু এ উপজেলায় ৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে। মিষ্টি আলু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং বাজারে চাহিদা প্রচুর, আবহাওয়ার অনুকূলে থাকলে ফলাফল ভালো হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে