মধুমতি নদীতে কৃষকের বের করে দেওয়া বিলের কচুরিপানা, ধানের গোড়া, দুরলী মধুমতি নদীর মানিকহার ব্রিজের পিলারে বেধে গিয়ে নদীর প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা কচুরিপানার স্তূপে পরিণত হয়েছে। নদীর পানির চাপে কচুরিপানার স্তূপ এতটাই পুরু হয়েছে যে, তার উপর দিয়ে লোকজন হেঁটে নদী পার হতে পারছে। ফলে গত ১৫ দিন ধরে গোপালগঞ্জের সঙ্গে ৫ জেলার নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল ও খুলনার সঙ্গে সরাসরি নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কচুরিপানার স্তূপ পরিস্কার করে নৌ-চালাচল সচল করার দাবী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
নৌযানে করে খাদ্য, নির্মাণ সামগ্রী, জ্বালানী, কৃষি পন্যসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্য স্বল্প খরচে পরিবহণ করা হয়। মধুমতির গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার ব্রিজের নীচে কচুরিপানার স্তূপ জমায় এলাকায় মশা-মাছিসহ রয়েছে সাপের উপদ্রপ। কচুরিপানার উপর দিয়ে হেঁটে নদীর এক পার থেকে অন্যপারে যাওয়া যাচ্ছে সহজেই। এ স্তূপ টপকে কোন নৌযান চালাচল করতে পারছে না। এতে বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল ও খুলনার সঙ্গে সরাসরি নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৫ দিন ধরে এ অবস্থা চলছে। কচুরিপানার স্তূপ পরিস্কার করে নৌ চালাচল সচল করতে স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জে মধুমতি নদীর মানিকহার ব্রিজটি গুচ্ছ পিলারের উপর নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে পিলারের ফাঁকে কচুরি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে গেছে, মধুমতি নদীর মধ্যে ৬ স্থানে ৩৬টি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে মানিকহার ব্রিজ। প্রত্যেক ভাগে ৬টি করে ফাঁকা পিলার রয়েছে। এ পিলারের ফাঁকে কচুরিপানা ঢুকে স্তূপ তৈরি করেছে। ব্রিজের নিচ দিয়ে নদী জুড়ে স্তূপগুলো বিস্তৃতি লাভ করেছে। চলাচল করতে না পেরে নদীতে নোঙ্গর করে আছে অসংখ্য নৌকা, ট্রলার ও কার্গো।
স্থানীয় উরফি ইউপি চেয়ারম্যান মনির গাজী বলেন, জেলার প্রধান নদী মধুমতি দিয়ে ৫ জেলায় প্রতিদিন অন্ততঃ দুইশ' নৌকা, ট্রলার, কার্গোসহ বিভিন্ন ধরণের নৌযান চলাচল করে। ১৫ দিন আগে মানিকহার ব্রিজের নীচে পিলারের সঙ্গে কচুরিপানা আটকে জমতে থাকে। আস্তে আস্তে তা নদীর উপরিভাগে স্তূপে পরিণত হয়। কচুরিপানার স্তূপের উপর দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। ফলে এ রুট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পণ্য পরিবহণ ও নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ব্রিজের ক্ষতি হচ্ছে।
বরিশালের সবজি চারা ব্যবসায়ী শাওন মোলস্নার বলেন, বরিশাল ও পিরোজপুর থেকে নৌকায় লাউ, কুমড়া, সিম, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপিসহ সবজির চারা এনে গোপালগঞ্জে বিক্রি করেন। এখন শীতের সবজির চারা বিক্রির পুরো মৌসুম চলছে। কিন্তু কচুরিপানার কারণে নৌকা গোপালগঞ্জ শহর ও আশপাশের গ্রামের হাট বাজারে নিতে পারছেন না। এতে ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
কার্গো চালক বশির মিয়া বলেন, 'এ নদী দিয়ে আমরা ধান, চালসহ বিভিন্ন পণ্য খুলনা ও বরিশালে পরিবহণ করি। কিন্তু মানিকহার ব্রিজের নীচে কচুরিপানার স্তূপের কারণে কার্গো চালাতে পারছি না। এতে আমাদের জীবন-জীবিকা অচল হয়ে পড়েছে।'
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম রিফাত জামিল বলেন, 'মধুমতি নদীতে এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় নৌ চালাচল বন্ধ রয়েছে, ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি লিখিত ও মৌখিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কচুরিপানা অপসারণে ৬-৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও বরাদ্ধ না পেলে কচুরিপানা অপসারণ সম্ভব নয়।'