বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প

পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়িয়েও ৫০ ভাগ কাজ হয়নি!

স্স্নিপার ও রেলস্ট্রেক বসানোর কাজ চলছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে বর্ধিত মেয়াদ ষষ্ঠ দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া
আবদুল আহাদ, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)
  ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়িয়েও ৫০ ভাগ কাজ হয়নি!

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্পের কুলাউড়া জংশন স্টেশন এলাকা থেকে স্স্নিপার ও রেলস্ট্রেক বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচ দফা মেয়াদ বৃদ্ধির পর অবশেষে ৪৪ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের মূল কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী ১৫ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে পঞ্চম দফার বর্ধিত মেয়াদ। এ সময়ের মধ্যেও প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুব কম। কারণ পাঁচবার মেয়াদ বৃদ্ধি করেও ৫০ ভাগ কাজ করতে পারেনি ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'কালিন্দ রেল নির্মাণ প্রকল্প'।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্র্নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপলাইনসহ মোট ৫১ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মিত হবে। এ সেকশনে গার্ডার ব্রিজ ১৭টি ও ৪২টি কালভার্ট পুনর্র্নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে পুনর্র্নির্মাণ করা হবে আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থাসহ ৬টি স্টেশন ভবন এবং পস্ন্যাটফর্ম।

সরেজমিন দেখা যায়, গত একসপ্তাহ থেকে রেললাইনে স্স্নিপার ও রেলস্ট্রেক বসানোর কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে কুলাউড়া জংশন এলাকা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার লাইন বসানো হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা যায়। তবে এই রেল পথে ১৭টি বড় ব্রিজের মধ্যে মাত্র ৬টির নির্মাণ কাজ হয়েছে। আছুরিঘাট, কণ্ঠিনালা, ধলছড়িসহ বাকিগুলোর কাজ চলমান। প্রকল্পের ৪২টি কালভার্টের মধ্যে শেষ হয়েছে মাত্র ২০টি। ৬টি রেলস্টেশন ভবন ও পস্ন্যাটফর্মের একটিরও কাজ হয়নি। সবমিলিয়ে প্রকল্পের অধিকাংশ নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। যারফলে পঞ্চম বারের বর্ধিত মেয়াদেও প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক সুলতান আলী বলেন, 'পঞ্চম দফায় কাজের মেয়াদ ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৪৮ ভাগ কাজ হয়েছে। দ্রম্নত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।'

ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'কালিন্দ রেল নির্মাণ' এর প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিন্দ সারনাল জানান, 'প্রকল্পের কুলাউড়ার দিক থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রথম দাফে স্স্নিপার ও রেলস্ট্রেক বসানোর কাজ চলছে। পঞ্চম দফার মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু, ৫ আগস্টের পর তিনিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা ভারতে গিয়ে আটকা পড়েন। ভিসা জটিলতায় বাংলাদেশে আসতে না পারায় কাজের অগ্রগতি কিছুটা কমেছে। তবে এই মেয়াদেই ৮০ ভাগ কাজ শেষ করার আশাবাদী তিনি।

উলেস্নখ্য, ব্রিটিশ-ভারত সরকার আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে ১৮৯৬ সালে চালু করে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল পথটি। ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় থেকে চালু এ রেলপথটি ২০০৩ সালের ৭ জুলাই বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলপথটির সংস্কার করে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালিন করেন কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার মানুষ। এর প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে বিদ্যমান মিটার গেজ লাইন সংস্কারের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প অনুমোদনের ৬ বছর পর ২০১৭ সালে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'কালিন্দ রেল নির্মাণ'-এর সঙ্গে সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফা মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অবশেষে পঞ্চম দফায় চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে