ঠাকুরগাঁওয়ে উদ্বোধন হলো কৃষকের ন্যায্যমূল্যের বাজার

কেরানীগঞ্জে ৬৫০ টাকা কেজি দরে ২০০ গ্রাম মাংস বিক্রি

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ঠাকুরগাঁও ও কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
বাজারমূল্যে যখন সাধারণ মানুষের হাঁসফাস অবস্থা তখন ক্ষুদে উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে যেন সরাসরি ক্রেতা সাধারণের কাছে শাক-সবজিসহ কৃষিপণ্য পৌঁছায় সে উদ্দেশ্য নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে উদ্বোধন হলো 'কৃষকের বাজার'। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগে শুরু থেকেই সরাসরি বাজার মনিটরিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বাজারে স্টল দিয়ে অংশগ্রহণের মূল কাজটি করছে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার সকালে বাজারের উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা। পেঁয়াজ-মরিচ-সবজি-মাছ-মাংসসহ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচাপণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির উদ্দেশে এ বাজার চালু হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। আপাতত এই বাজার পরীক্ষামূলকভাবে শুক্র ও শনিবার সপ্তাহে এই দুই দিন করে চলবে। সাধারণ মানুষ চাইলে জেলা প্রশাসন সপ্তাহে ৭ দিনই চালানোর উদ্যোগ নেবে। বাজারে দরিদ্র ও দুস্থদের জন্য 'মানবতার সওদাপাতি' নামের স্টল খোলা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য সচ্ছল ক্রেতারা তাদের বাজার থেকে কিছু পণ্য স্বেচ্ছায় এখানে দান করলে সেটা বিনামূল্যে পাবেন দুস্থ প্রতিবন্ধী ও অসহায়রা। বাজার পাহাড়াসহ মনিটরিংয়ে যুক্ত আছে সেনাবাহিনী। বাজার করতে এসে শহরের আশ্রমপাড়ার পারভেজ জানালেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য না থাকায় বাজারে পণ্যমূল্য তারা কিছুটা সস্থা পাচ্ছেন। আরেকজন ক্রেতা হাজীপাড়ার রোমেল জানান, বাজারে আলু, মূলা, পেঁয়াজ, ফুলকপি, কাঁচামরিচ বাজারের তুলনায় কিছুটা কম দামে পেয়েছেন। তবে শাহ পাড়ার আলমগীর, সরকার পাড়ার সাবরিনা জানালেন, 'কিছু সবজির দাম বাজারের সমানও আছে। তবে টাটকা হওয়ায় আমরা সেগুলো কিনলাম।' কহর পাড়ার ক্ষুদ্র সবজি চাষি কালাম এসেছেন তার ক্ষেতের শিম ও বরবটি বিক্রি করতে। তিনি জানালেন, 'আড়তদারি না থাকায় আমি যে দামে বিক্রি করছি সেটা আড়তের চাইতে তুলনামূলক লাভজনক।' ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোজাম্মেল বললেন, এখানে পণ্যের তুলনায় ক্রেতা বেশি হওয়ায় আমরা দ্রম্নত বিক্রি করতে পারছি।' বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মনিটরিং করতে আসা ঠাকুরগাঁও সেনাক্যাম্পের ক্যাপ্টেন ফয়েজ বলেন, প্রথম দিনই বাজারের পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক। বেলা বাড়ার সঙ্গে জমজমাট হয়ে উঠছে কৃষকের বাজার। সেনাবাহিনী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। শুক্রবার সকালে এই বাজারের উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা। তিনি বাজার ঘুরে দেখেন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে বাজার নিয়ে সুবিধা-অসুবিধা শুনতে চান এবং বাজারের উদ্দেশ্য লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হয় ৭৫০ টাকায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের 'ন্যায্যমূল্যের বাজারে' ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু দাম কমই না, নিম্ন আয়ের মানুষের আমিষের চাহিদা বিবেচনায় ২০০ গ্রাম মাংসও বিক্রি হচ্ছে এ বাজারে। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির মধ্যে শুক্রবার সকালে উপজেলার কদমতলি গোলচত্বর এলাকায় কম দামে গরুর মাংস পেতে ভিড় করেন ক্রেতারা। কেরানীগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো ২০০ গ্রাম গরুর মাংস বিক্রি হওয়ায় খুশি ক্রেতারা। এছাড়া কসাইদের চেয়ে কম দাম ও শিক্ষার্থীরা ভালো মানের মাংস এখানে পাচ্ছেন বলে জানান ক্রেতারা। আলাউদ্দিন বেপারী নামে এক ক্রেতা বলেন, 'জিনজিরা, আগানগর ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নসহ উপজেলায় প্রতি কেজি মাংস ৭৫০ টাকা। এখানে কেজিতেই ১০০ টাকা কম। গতকালকে লোকমুখে শুনে শিক্ষার্থীদের এ বাজারে এসেছি। মাংসের মান খুবই ভালো।' মাংস কিনতে আসা মহসিন মিয়া বলেন, '২ কেজি মাংস নিয়েছি ৬৫০ টাকা কেজি দরে। অথচ কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন বাজার থেকে নিলে ৭৫০ টাকা করে নিত। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের উপকারই হলো।' এদিকে ২০০ গ্রাম মাংস কিনে বাড়ি ফিরছিলেন কদমতলি খালপাড় এলাকার রিজিয়া খাতুন বলেন, 'গত ছয়মাস মাংস খাইনি। কম দামে পেয়ে অনেকদিন পর ২০০ গ্রাম মাংস নিয়ে যাচ্ছি।' ন্যায্যমূল্যের বাজারের বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া জানান, শিক্ষার্থীদের বাজারে শাক-সবজির পরে এবার গরুর মাংস সুলভ মূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজারের চেয়ে কম দামে ভোক্তাদের কাছে গরুর মাংস সরবরাহ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ৬৫০ দরে ২০০ গ্রাম গরুর মাংস বিক্রি নিঃসন্দেহে প্রশংসা দাবিদার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধি আল আমিন মিনহাজ ও নাজমুল ইসলাম হৃদয় বলেন, 'আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সিন্ডিকেট ভাঙা এবং সাধারণ মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস কিনতে পারে, সে জন্য আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে একজন ক্রেতা ২০০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ২ কেজি পর্যন্ত মাংস কিনতে পারবেন। আমরা সপ্তাহে শুক্রবার এ 'ন্যায্যমূল্যের বাজার' চালু রাখব এবং পরবর্তীতে কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করব। এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।' এ সময় ন্যায্যমূল্যের বাজারের উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষার্থী আসাদ নূর সাব্বির, সোহান খান, অর্নব মাহমুদ, আরিয়ান আহমেদ হৃদয়, রতন হোসেন, মো. শাওন, নয়ন হোসেন, দ্বীপ খান, মো. আকাশ ও হাফসা ইসলাম প্রমুখ।