ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরত্ব। মিয়াবাড়ি-ঘোলপাড়-দালালবাজার সড়ক। সড়কের একপাশে ছাগলা হাসনাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা। অন্যপাশে ছাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সড়কের পশ্চিম পাশে সারি সারি ফলদ গাছের চারা, কলম আর মৌসুমি সবজির চারা। বিভিন্ন প্রজাতির কলমে বারোমাসি আম, আমড়া, জাম্বুরা, আমলকি, লেবুসহ নানা জাতের ফল ধরে আছে। স্থানীয়রা জানান, এটি হাবিব নার্সারি। এই নার্সারি দেখে বেকার যুবকরা ওই গ্রামে আরও তিনটি নার্সারি করেছেন।
বোরহানউদ্দিনে প্রথম বাণিজ্যিক নার্সারির কারিগর মো. হাবিব। পড়াশোনা বলতে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা গ্রামে এক সময় বর্গাচাষি ছিলেন হাবিব। কালক্রমে প্রায় তিন একর জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল নার্সারি। শুরু থেকেই সাফল্য তাকে ধরা দিয়েছে। নার্সারির আয়ে তার পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। অন্যদিকে তিনি প্রমাণ করেছেন, অন্য জেলা থেকে গাছের চারা বা কলম না এনে চেষ্টা, একাগ্রতা ও পরিশ্রম থাকলে নার্সারিতে উৎপাদিত চারা দ্বারা এলাকার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। হাবিবের অনুপ্রেরণায় স্থানীয় যুবকরা নার্সারি করার দিকে ঝুঁকছেন।
দুই শতাধিক প্রজাতির ফলদ চারায় সমৃদ্ধ তার নার্সারি। দিন দিন তার নার্সারিতে গাছের প্রজাতির সংখ্যা বাড়ছে। থেমে নেই বিভিন্ন জাত সংগ্রহ। নতুন প্রজাতি বা গাছের খবর শুনলেই সেদিকে ছুটে যান তিনি। এছাড়া প্রতি মৌসুমে প্রায় বিশ প্রজাতির সবজির চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেন। ফলে বর্ষায় অল্প কিছু সময় বাদ দিলে সারা বছরই তার নার্সারি কর্মচঞ্চল থাকে।
হাবিব জানান, 'বোরহানউদ্দিনসহ গোটা ভোলা জেলায় জলপথে স্বরূপকাঠি থেকে গাছের চারা আসত। এখনো আসে। ২০০২ সালে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, স্বরূপকাঠিতে চারা উৎপাদন হলে আমাদের এখানে কেন হবে না? এরপর আমি স্বরূপকাঠি যাই। রাতে হোটেলে থাকতাম, আর দিনে ওদের নার্সারিতে ঘুরে যেতাম। ওরা কীভাবে গুটি কলম, শাখা কলম, গ্রাফটিং করে তা মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। কাজটা আমি আস্তে আস্তে শিখে ফেলি। তারপর স্বরূপকাঠি থেকে কিছু গাছ কিনে এলাকায় আসি। আমার জমি ছিল না। আট শতক জমি বর্গা নিয়ে কলম করার কাজ শুরু করি। তখন মাত্র চার ভাগের মধ্যে এক ভাগ কলম হয়েছে, বাকিগুলো হয়নি। আবার স্বরূপকাঠি যাই। ভুলগুলো সুধরাই। ওদের পরামর্শ নেই। আর সমস্যা হয়নি। এরপর বগুড়াসহ দেশের অনেক এলাকায় শিখতে গিয়েছি। আবার আসার সময় মাতৃগাছ কিনে বাড়ি ফিরেছি। জাত বেড়েছে, প্রজাতি বেড়েছে।
হাবিব আরও জানান, নার্সারির আয় দিয়েই তার সংসার চলে। এ থেকে কিছু সঞ্চয় করেন। ১৫০ শতাংশ জমিও কিনেছেন। গড়ে প্রতিদিন তার নার্সারিতে ৫ জন লোক কাজ করে। এ বছর প্রায় ২৫ লাখ টাকার গাছের চারা, কলম ও সবজি চারা বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকা আয় হয়েছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে লাভের পরিমাণ আরও বেশি হতো।
হাবিবের স্ত্রী মনোয়ারা শুরুর দিকে স্বামীর সঙ্গে নার্সারিতে সমানতালে কাজ করতেন। তাদের ২ ছেলে ২ মেয়ে। হাবিবের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, নিজে এসএসসি পাস করে আর পড়াশোনা করা হয়নি। কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষিত করবেন।
ওই বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দে জানান, কৃষি অফিস তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোবিন্দ মন্ডল বলেন, 'বেকার যুবকদের জন্য হাবিবের নার্সারি একটি বড় উদাহরণ। তিনি ক্রমশ জেলার বাইরের চারা এবং কলমের নির্ভরশীলতা কমাচ্ছেন।'