মেহেরপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার ও গাংনী থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সহোগলপুর কালিগাংনী মাঠের এ বিলটি খাগড়ার বিল নামে পরিচিত। এখানকার মাটি উর্বর হলেও চাষিরা কোনো বছরই তিনটি ফসল ঘরে তুলতে পারেন না। বিলের পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছরই মাঠে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ফলে ঘটে ফসলহানি। আবার যে ফসলটুকু জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পায় তা ঘরে তুলতেও বেশ কষ্টসাধ্য। মাঠের রাস্তা না থাকায় ফসল ঘরে তুলতে মজুরী খরচ দিতে বেগ পেতে হয়। স্থানীয়রা খাল সংস্কারের পাশাপাশি জরাজীর্ণ কাঁচা রাস্তাটি সংস্কারের আবেদন জানান। তবে ইউপি চেয়ারম্যান রাস্তা ও খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাংনীর নওপাড়া, সহোগলপুর, ধলা, গাড়াবাড়িয়া ও মেহেরপুর সদরের কলবাড়িয়া ও কালিগাংনীর বিশাল মাঠটি খাগড়ার বিল নামে পরিচিত। এ মাঠে রয়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমি। এক সময় এ বিলে শুধু আমন ধান হতো। জমি থাকলেও ফসল না হওয়ায় চাষিরা কোনো আবাদই করতেন না। তৎকালীন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে ওই বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি খাল খনন কর্মসূচি হাতে নেন। খাল খননের পর থেকে মাঠের আর কোনো ফসলহানি হতো না।
খালটি খাগড়ার বিল থেকে নওপাড়া ভাটপাড়া হয়ে কাজলা নদীর সঙ্গে মিশেছে। খাল খননের পর ওই মাঠে দু'টি কখনো তিনটি ফসল আবাদ হতো। তবে মাঠের ফসল ঘরে তুলতে বেশ বেগ পেতে হতো চাষিদের। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা মাটি দিয়ে রাস্তা তৈরি করেন। এতে কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব হলেও বছর চারেক আগে ওই রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়। ফের চাষিরা ফসল ঘরে তুলতে বেগ পান। অনেক সময় ফসল ঘরে তুলতেও পারে না।
গেল বছর দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে রাস্তাটিতে মাটি ভরাট করে। কিন্তু পুরোপুরি সংস্কার না করায় সেটিও কাজে আসছে না। মাঠেই ধান মাড়াই ও পাট পচিয়ে এবং আঁশ ছাড়িয়ে শুকিয়ে ঘরে তোলেন। এতে খরচ বেড়ে যায়। মাঠের মধ্যে আজো পাটের আঁশ ছাড়ানো ও পাটকাঠি দেখা গেছে। অনেক ফসল তলিয়ে আছে, যা চাষিরা আর ঘরে তুলতে পারবেন না।
কুলবাড়িয়া গ্রামের চাষি নহরুল ইসলাম জানান, তার এ বিলের মাঠে ১০ বিঘা জমি রয়েছে। আগে বিলে জলাবদ্ধতা না থাকায় তিনটি ফসল ঘরে তুলতেন। এখন বিলের পানি বের হতে না পারায় মাত্র একটি ফসল হয়। বিলের পানি বের হবার খালের মুখে পুকুর খনন ও ভরাট করে চাষাবাদ করায় নওপাড়া হয়ে মাঠের পানি কাজলা নদীতে পড়তে পারে না। এতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাছাড়া যে ফসল হয় তা ঘরে তোলার জন্য কোনো রাস্তা নেই। একই কথা জানালেন সহোগলপুরের চাষি হৃদয় ও কালিগাংনী গ্রামের চাষি মিরাজ।
কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা জানান, মাঠের ফসল ঘরে তোলার জন্য তিনি রাস্তাটি তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে রাস্তাটি হেরিংবন্ড করার জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থ পাওয়া গেলেই রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।