বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

শান্তিগঞ্জে এক সড়কেই দুঃখ ছয় গ্রামের দশ সহস্রাধিক মানুষের

কাঁচা সড়কে গাড়িতে ঘটেছে গর্ভপাতের ঘটনা হেঁটে স্কুলে আসে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধনে সড়ক পাকাকরণের দাবি
সোহেল তালুকদার, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ)
  ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শান্তিগঞ্জে এক সড়কেই দুঃখ ছয় গ্রামের দশ সহস্রাধিক মানুষের
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে পাকাকরণ না করায় বেহাল গণিগঞ্জ বাজার-বাহাদুরপুর কাঁচা রাস্তা -যাযাদি

'আমি পনেরো বছর ধরে এই সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাই। অনেক ছোটবড় দুর্ঘটনা আমার চোখের সামনেই ঘটেছে। শুধু তাই নয়, অনেক রোগীও এ রাস্তায় যাতায়াতের সময় আরও অসুস্থ হয়েছেন। এমনকি দুইজন গর্ভবতী মহিলার ডেলিভারিও আমার গাড়িতে হয়েছে, আমার চোখের সামনেই হয়েছে।'

মনে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সিএনজি ফোরস্ট্রোক চালক, গণিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা সাব্বির আহমদ। সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার গণিগঞ্জ বাজার থেকে বাহাদুরপুর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার কাঁচা সড়ক নিয়ে এই ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। ছয়টি গ্রামের দশ হাজারেরও বেশি মানুষ এই সড়কপথে চলাচল করেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুইশ' বছর ধরে এই জনপদে মানুষের বসবাস। শুরুতে মানুষ হেমন্তকালে হেঁটে ও বর্ষাকালে নৌকায় যাতায়াত করতেন। এখন রাস্তাঘাট হয়েছে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট পাকা হলেও তেহকিয়া, শিমুলবাক, রঘুনাথপুর, গোবিন্দপুর, লালুখালী ও বাহাদুরপুর গ্রামের মানুষের প্রধান এই সড়ক এখনো কাঁচা-ই রয়ে গেছে। বাহাদুরপুর থেকে তেহকিয়া গ্রাম পর্যন্ত সম্পূর্ণ রাস্তাটিই কাঁচা। যানবাহন চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী। শিক্ষার্থী, রোগী, শিশু-বৃদ্ধ মানুষের চলাচলে খুবই অসুবিধা হয়। রাস্তাটি কাঁচা তো কাঁচাই, তার উপর আবার মারাত্মকভাবে ভাঙা ও গর্ত। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় বৃষ্টি হলে। তখন না চলে সিএনজি, না নৌকা। এ সময় কাঁদা মাড়িয়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় মাইলের পর মাইল। এমতাবস্থায়, এ সড়কপথে মানুষের চলাচল একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের হেঁটে চলাচল করতে হয়।

সম্প্রতি মাটি কাটার পর রাস্তাটি পাকা করার দাবি তুলেছেন এই অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সব মহলের মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নে গণিগঞ্জ বাজারে একটি মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধনটি পরিচালনা করেন- সমাজকর্মী মুহিবুর রহমান মানিক। বক্তব্য রাখেন- সমাজকর্মী ডা. নজরুল ইসলাম রাজু, সিএনজিচালক সাব্বির আহমদ, সমাজকর্মী শিব্বির আহমদ, জাকারিয়া আহমদ স্বাধীন, সিরাজুল আলম, শাহীনুর রহমান শাহীন, এলখাছ মিয়া ও ফখরুল ইসলাম জয়।

এ সময় ফেরদৌস আহমদ ইরাম, মুক্তার আলী, মো. আকিল মিয়া, এনামুল হক, মামুন আহমদ, রাসেল মিয়া, নিজাম উদ্দিন ও নবী হোসেনসহ গণিনগর ষোলোগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

সড়কে চলাচল করে গণিনগর ষোলোগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে আসেন দশম শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা আক্তার পুষ্পা, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অশীল দাশ ও জুয়েদ তালুকদার। তারা জানায়, কাঁচা রাস্তা হওয়ায় স্কুলে আসার সময় তারা গাড়ি পায় না। হেঁটে আসতে হয় বলে সকাল ৭টার আগে রওনা দেয়। প্রতিদিন প্রায় ২-৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। তাদের দাবি রাস্তাটি যেনো দ্রম্নত পাকা করে দেওয়া হয়।

মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, 'আমরা অনুরোধ করছি, যত দ্রম্নত সম্ভব রাস্তাটিতে পাকা করে দেওয়া হোক। এ নিয়ে কোনো টালবাহানা না করার আহ্বানও জানাচ্ছি। না হলে আরও বড় আন্দোলনে যাবে ছয় গ্রামের মানুষ।'

শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আল নূর তারেক বলেন, একবার এ সড়কের টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন না হওয়ায় চলতি মাসের ১৭ তারিখ আবারও টেন্ডার ওপেন হবে। রাস্তার কাজটি দ্রম্নত শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে