শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

চাঁদপুরে লাইট পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ, তিনগুণ ফলন বৃদ্ধি

চাঁদপুর প্রতিনিধি
  ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে রাতে শতশত বৈদু্যতিক বাতি জ্বালিয়ে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল -যাযাদি

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা রাতের বেলায় শতশত বৈদু্যতিক বাতি জ্বালিয়ে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল। শীতকালে রাতের বেলা দিনের পরিবেশ সৃষ্টি করে ড্রাগন চাষের এমনই উদ্যোগ নিয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন উপজেলার সাদুলস্নাপুর এলাকায় সিকোটেক্স অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার। তিনি তার গ্রামে ৩০ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। তার সফলতা দেখে এখন অনেকেই এ পদ্ধতিতে ড্রাগন ফল চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, রাতে যখন শতশত বৈদু্যতিক বাতি একসঙ্গে জ্বলে উঠে, দূর থেকে আলোর রোশনাই নজরে আসে। দেখে মনে হয় আকাশে তারা জ্বলছে। সে এক মনোরম দৃশ্য। রাতে এই দৃশ্য দেখতে অনেকেই ছুটে আসেন ড্রাগন বাগানে।

জানা যায়, দিনের দৈর্ঘ্য কমে গেলে শীতকালে ড্রাগনের ফুল ফল ধরে না। মার্চ মাসের শেষে ফুল ধরে। তাপমাত্রা বাড়লে ফল বড় হয়। জুন মাস থেকে বাজারে ড্রাগন ফল উঠতে শুরু করে। আর নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফল ধরে না।

সিকোটেক্স অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার বলেন, 'আমি গত ৩ বছর আগে নাটোর থেকে ৬০টি ড্রাগনের চারা এনেছিলাম শখের বসে, দেখলাম এটাতে ভালো ফল হয়। পরবর্তী সময়ে ইউটিউব ঘেটে টাঙ্গাইল গিয়ে অনেক বড় বাগান দেখে আরও উদ্বুদ্ধ হলাম। সেখান থেকে আরও চারা আনি। কীভাবে গাছ লাগায় সেগুলো দেখে নিজ জমিতে ২০২২ সালে ড্রাগন বাগান তৈরি করি।'

তিনি আরও বলেন, '২০২২ ও ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে চাষ করেছি। নওগাঁর আমার এক বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার আজাদ শীতকালে ড্রাগন ফল চাষের প্রযুক্তি সংগ্রহ করে দেন আমাকে। সেপ্টেম্বর মাসে ড্রাগন ক্ষেতে লাইট বসানো শুরু করেন। আপাতত চিন থেকে আনা ২ হাজারটি লাইট ক্ষেতে সেট করেছি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৩ ঘণ্টা ও সূর্যোদয়ের আগে আরও ৩ ঘণ্টা লাইটগুলো জ্বালানো হয়। ক্ষেত দিনের আলোর মতো হয়ে যায়। লাইটিংয়ের ফলে রাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ে। এতে বাগানে বেশি পরিমাণ ফুল ও ফল ধরছে। বর্তমানে বাগান ফুল-ফলে ভরে গেছে।'

তিনি জানান, নতুন পদ্ধতিতে আগের চেয়ে ৬-৭ টন বেশি ফলন হবে। প্রতিটি খুঁটিতে ৭ থেকে ৮ কেজি ফলন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে তিনগুণ ফলন বেশি বৃদ্ধি পাবে। ফলের মানও ভালো হচ্ছে। গ্রীস্ম মৌসুমে ফলের দাম কম থাকে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি ড্রাগন ৮০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে তার বাগানের ড্রাগন ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, কৃত্রিম আলো ব্যবহার দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর হয়, শীতকালে যখন দিনের দৈর্ঘ্য কমে আসে তখনই কৃষকরা পদ্ধতিটা ব্যবহার করেন। এ পদ্ধতিটা এখন বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ব্যবহার করছে। এতে করে উৎপাদন যেমন বাড়বে তেমনি বাইরে থেকে আমদানি কমানো সম্ভব হবে। মতলব উত্তরে সিকোটেক্স অ্যাগ্রো লিমিটেড ফার্মে কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন, আমরা আশাবাদী এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে