বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মেয়াদ শেষে তৈরি হয়েছে শুধু একটি পিলার

সোনাতলায় অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে ব্রিজ নির্মাণের কাজ

বগুড়া প্রতিনিধি
  ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সোনাতলায় অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে ব্রিজ নির্মাণের কাজ
বগুড়ার সোনাতলায় অধিগ্রহণ জটিলতায় নির্মাণ কাজ আটকে থাকা খাঁনপাড়া এলাকার বেইলি ব্রিজ -যাযাদি

৮০'র দশকে অর্থাৎ ১৯৮৩ সালে নির্মাণ হয়েছিল বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার খানপাড়া এলাকার বেইলি ব্রিজটি। স্থানীয়রা একে কুমিরখাকি ব্রিজ বলেই চেনেন। ব্রিজটি নির্মাণের সময় জায়গা অধিগ্রহণের বিষয়টি সরকারিভাবে তেমন কোনো শক্ত নির্দেশনা ছিল না। এই সুযোগে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের ইচ্ছে মতো ভেঙে পড়া ব্রিজটির একটু দক্ষিণে স্থান নির্ধারণ করে বর্তমানের বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সরকারিভাবে তেমন কোনো নিয়ম নেই। ফলে মৌখিকভাবেই জমি মালিকদের কিছু অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে পরে কোনো অর্থই দেওয়া হয়নি। তখনকার ওই অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ না করায় বর্তমানের ব্রিজ নির্মাণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আবারো মৌখিক কথার ভিত্তিতে জায়গা দিতে রাজি নয় এখানকার জমির মালিকরা।

তবে সওজ বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী-২০২৩ সালের মাঝামাঝি খানপাড়া ব্রিজটির দুইপাশের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণবাবদ সাড়ে ৫ কোটি টাকা বগুড়া জেলা প্রশাসকের অধিগ্রহণ শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসবের কিছুই বিশ্বাস করছেন না জমি মালিকরা। তাদের দাবি অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে কাজ করতে দেবেন না। এমন জটিলতার কারণে গত প্রায় এক বছর আগে এই ব্রিজের কাজ শুরু হলেও এ পর্যন্ত মাত্র একটি পিলার তৈরি হয়েছে।

১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৫ মিটারের ব্রিজটির নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা গুলসান এলাকার হাসান টেকনো জেভি। তবে নির্মাণকাজ করছে মূলত বগুড়ার এমএস কনস্ট্রাকশ। এসবের মধ্যে রয়েছে নানা ঘটনা। যেমন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে ব্রিজের দুইপাশে প্রায় ১৫ জনের জমি থাকলেও ঝামেলাটা করছেন মূলত দুইজন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আতিকুর রহমান বাদল বলেন, 'খাঁনপাড়া গ্রামের রিবু ও তার আর এক ভাই আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি সমুদায় টাকা না দেওয়ায় এ ঝামেলায় পরতে হয়েছে। ওই সময় রিবু সাহেব বলেছিলেন যে, 'আমাকে দশ লাখ টাকা দেন, আমি এসব ঝামেলা মিটিয়ে দিচ্ছি। পরে যখন অধিগ্রহণের টাকা হবে তখন সবাইকে দিয়েন।০' কাজটি কয়েক বছর আগের। এমনিতেই রড সিমেন্টের বাজার বাড়তি। এর মধ্যে এমনিতেই টাকা দিলে কাজের মান খারাপ হবে। এজন্য আমি টাকা দেইনি।'

এ বিষয়ে রিবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'আমি বাড়তি কোন টাকা চাইনি। তবে ১৯৮৩ সালে যখন এখানে ব্রিজটি হয়েছিল তখনও আমাকে অধিগ্রহণের টাকা দিতে চেয়ে দেয়নি। তাই আমি আর মুখের কথা বিশ্বাস করি না। টাকা পরিশোধ করে কাজ শুরু করুক, কোন বাধা নেই।'

সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, 'ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সঙ্গে সোনাতলা থেকে মোকামতলা পর্যন্ত রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে খানপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন ব্রিজটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দ্রম্নত ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া দরকার। কিন্তু অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে কাজটি বন্ধ হয়ে আছে। ইতিমধ্যে ঠিকেদারি প্রতিষ্ঠান জটিলতার সমাধান চেয়ে লিখিত আবেদন করেছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমি তৌসিলদারকে নির্দেশ দিয়েছি, দ্রম্নত সময়ের মধ্যে আমাকে বিষয়টি জানাতে।'

ইউএনও আরও বলেন, 'যেহেতু ৭ ধারা হয়ে গেছে সেহেতু অধিগ্রহণের টাকা পেতে আর কোন সমস্যা নেই। আমি জমির মালিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হবে।'

বগুড়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'জেলায় আমাদের নির্মাণাধীন মোট ১৫টি ব্রিজের মধ্যে ১৪টির কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু সোনাতলার খানপাড়া এলাকার ব্রিজটির কাজ অসমাপ্ত। মূলত জমি মালিকরা একটু সহানুভূতিশীল হলেই দ্রম্নত কাজ শেষ করা সম্ভব। জমি অধিগ্রহণ বাবদ ইতিমধ্যে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। তাই জমির মালিকরা অবশ্যই টাকা পাবেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে