বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সরল ইউপির সমুদ্র লাগোয়া প্যারাবনের কয়েক হাজার কেওড়া ও বাইন গাছের চারা সাবাড় করে জোরপূর্বক বনের জায়গা দখল চেষ্টার অভিযোগ করেছেন বন বিভাগের বাঁশখালী উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান রাসেল। এ ঘটনায় পশ্চিম সরল ১নং ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিন ও আলী হোসেনসহ ৩৪ জনের নাম উলেস্নখ করে বাঁশখালী থানায় এজাহার দায়ের করেন বাঁশখালী উপকূলীয় রত্নপুর বিট কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মিয়াজি। বন বিভাগের পক্ষে আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান রাসেল।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বন বিভাগের একটি টহল দল সরলের স্থানীয় দুষ্কৃতকারীকে একটি দল ম্যানগ্রোভের কেওড়া ও বাইন গাছের চারা সাবাড় করতে দেখতে পায়। পরে ম্যানগ্রোভ বনের গাছ কাটতে বাধা দিলে জায়গাটি তাদের পূর্বপুরুষের বলে দাবি করেন তারা। একই সঙ্গে স্থান ত্যাগ না করলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ সময় তারা দেশীয় অস্ত্রসহ সজ্জিত থাকায় বন বিভাগের কর্মীরা কাউকে আটক না করে চলে আসেন। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রায় ২০ হাজার কেওড়া ও বাইন গাছের সাবাড় করা চারা উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে ৫টি দা ও ১০টি কাস্তেও জব্দ করে বন বিভাগ। এতে বনের ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে এ ঘটনায় চিহ্নিত ৩৪ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করা হয়।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, 'বাঁশখালী উপজেলার কাথরিয়া ও সরল মৌজায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ম্যানগ্রোভ বনের জন্য উপকূলীয় চরে ১০৫ হেক্টর জায়গায় আড়াই লাখ চারা রোপণ করা হয়। এসবের মধ্যে কেওড়া ও বাইন গাছের চারা অন্যতম। বর্তমানে চারা গাছগুলো দৃশ্যমান। তবে ৫ আগস্টের পরে দেশে বিশৃঙ্খলার সুযোগে বন বিভাগের জায়গা দখল করে লবণের ঘের ও মাছঘের করার জন্য বন বিভাগের রোপণ করা কয়েক হাজার চারা গাছ সাবাড় করে স্থানীয় একটি চক্র। পরে একই চক্র বাগানের চারদিকে দৃশ্যমান বাঁধ দিয়ে ম্যানগ্রোভের কয়েক হেক্টর জায়গা দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। যা এখনো চলমান রয়েছে।
অন্যদিকে অভিযুক্তরা জানান, উপকূলীয় জায়গাটি তাদের পূর্বপুরুষের। তারা দীর্ঘদিন সেখানে লবণের মাঠ ও মাছঘের করেছেন। তবে লবণের দাম কম থাকায় বেশ কয়েক বছর কিছু করেননি। এতে করে জায়গাটি পরিত্যক্ত ছিল। এখন লবণের দাম বেশি। তাই তাদের জায়গায় লবণ ঘের করতে চান। তবে বন বিভাগের কারণে সেটা করতে পারছেন না।
এদিকে এ ঘটনায় বনের জমি রক্ষা ও চারা গাছ সাবাড়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান রাসেল।
বাঁশখালী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকা ও চর এলাকা হওয়ায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তারপরও জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, 'অভিযোগ আসার পরপরই বন বিভাগ ও পুলিশকে দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ওই এলাকার বন কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। আমি নিজেও এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'