কালিয়াকৈর রেলস্টেশনে বন্ধ সেবা, মাদকের ছড়াছড়ি

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুর কালিয়াকৈরের নির্মাণ শৈলী, নান্দনিকতায় আর আধুনিকতায় দেশের অন্যতম বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশন। ঢাকার কমলাপুরের আদলে বিপুল ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনে ট্রেন তৈরি করা হলেও এখানে ট্রেন না থামায় পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে যাত্রী সেবা। নীরব স্টেশন এখন শুধুই যেন মাদকসহ নানা অপরাধের আখড়া। নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এলাকাবাসী, যাত্রী ও রেলস্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি স্টেশনটি নির্মাণ করে আওয়ামী সরকার। জয়দেবপুর-রাজশাহী রেললাইনের উপজেলার গোয়ালবাথান এলাকায় বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের পাশে দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন নির্মিত হয়। প্রতিদিন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে ১০ থেকে ২০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করবেন- এমনটা ধরেই স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। গত ২০১৮ সালে আওয়ামী সরকার নির্মাণ শৈলী, নান্দনিকতায় আর আধুনিকতায় দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের পাশে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশাল পরিসরে এই স্টেশন উদ্বোধন পর এখান থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ডেমো ট্রেন চলাচল করত। সে ট্রেনও করোনাকালীন সময় থেকে বন্ধ। এছাড়াও বিভিন্ন সময় এ স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিলাসবহুল দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনে থামানো হতো টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর নানা কারণে এখন সে দুটি ট্রেনও বন্ধ। অথচ বিলাসবহুল এই রেলস্টেশনে আধুনিক টিকিট কাউন্টার, সিগনাল পদ্ধতি, উন্নতমানের ভিআইপি বিশ্রামাগার সবকিছু রয়েছে। এই স্টেশন হয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের পথে ভারতেরসহ ৪৮টি ট্রেন চলাচল করত। এর মধ্যে ভারতেরসহ ৮টি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ৪০টি ট্রেন চলাচল করলেও দীর্ঘদিন ধরে বিশাল এই স্টেশনে ট্রেন থামে না একটাও। ফলে সেবা না থাকায় টিন দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভিআইপি বিশ্রামাগার। রাজশাহীর সিল্কসিটি, দিনাজপুরের একতা, খুলনার চিত্রা, নীলফামারীর নীল সাগর, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ এক্সপেক্স এই লোকাল ট্রেনগুলো আপ এন্ড ডাউনে ১০টা ট্রেন হলেও স্টেশনে কোনো সমস্যা হবে না। এ ট্রেনগুলো স্টেশনে থামলে স্বাচ্ছন্দ্যে কম খরচে চলাচল করতে পারবে ঢাকা, গাজীপুর, কালিয়াকৈর, সাভারসহ উত্তবঙ্গের মানুষ। বিপুল যাত্রীর চাহিদা থাকলেও ট্রেনের অভাবে স্টেশন থেকে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে নিয়মিত ট্রেন থামানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ দেখবালের অভাবে নষ্ট হচ্ছে, উন্নত কাচের দেয়াল, রঙিন সাদাসহ বিলাসবহুল স্টেশনের বিভিন্ন মূল্যবান স্থাপনা। বিপুল ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনটি এখন যেন শুধু টিকটক আর বিনোদন কেন্দ্র। অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরাও। এছাড়াও আয় না হলেও এ স্টেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বিদু্যৎ, পানিসহ অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় সুনসান নীরব পড়ে থাকছে দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনটি। ফলে এটাকে কেন্দ্র করে চুরি, ছিনতাই, মাদকের আখড়াসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ স্টেশনে ১২ জন জনবল থাকলেও নেই নৈশপ্রহরী। নিরাপত্তার অভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে স্টেশনটির বিভিন্ন মালামাল। গত কয়েক দিন আগেও চুরি হয়ে গেছে স্টেশনের পানির পাম্প। সেখানে নানা অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় আতঙ্কে আছেন রেলস্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না, তাহলে এত টাকা খরচ করে বিলাসবহুল এ স্টেশন দরকার কি ছিল? একাব্বর হোসেন, রায়হান কবীর, আকলিমা আক্তার ও আনোয়ার হোসেন বলেন, এ স্টেশনে একটাও ট্রেন না থামায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচলরত মানুষ। দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনে এখন শুধু টিককট ও বিনোদনের কেন্দ্র। এছাড়াও নিরাপত্তা না থাকায় এখানে চুরি, ছিনতাই, মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে স্টেশনটি। উজ্জল হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি অচিরেই দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনটি যেন সচল হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউছার আহাম্মেদ জানান, এ স্টেশনে ট্রেন থামে না, এ বিষয়টি অবগত আছি। আর সেখানে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু অবগত হয়েছি, খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।