মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

মধুপুর গড়ে লাল মাটিতে চা চাষ

মেহেদী হাসান বকুল, মধুপুর (টাঙ্গাইল)
  ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মধুপুর গড়ে লাল মাটিতে চা চাষ
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের আনারসের রাজধানীতেও চা চাষ -যাযাদি

সিলেট পঞ্চগড়ের পর এখন টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের আনারসের রাজধানীতেও চাষ হচ্ছে চা। উপযোগী মাটি ভূ-প্রকৃতি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ায় দেখা দিয়েছে চা চাষের বাণিজ্যিক ও চাষ সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা। রোগ বালাই পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় কম খরচে পরীক্ষামূলক চা চাষ হচ্ছে। মাটির গুণাগুণের কারণে স্বাদ গন্ধ ঘ্রাণেও রয়েছে ভিন্নতা। ফলে বাগান দেখতেও সুন্দর হওয়ায় ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। ৪ বছর আগে গড়ে তোলা বাগানের ফলন পেয়ে খুশি কর্তৃপক্ষ। কৃষি বিভাগ বলছে, গড় অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া চা চাষের জন্য উপযোগী। এ অঞ্চলে চা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আনারস কলার মতো মধুপুর হয়ে উঠবে চা চাষের জনপদ।

জানা গেছে, বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ড বৃহত্তর ময়মনসিংহের গারো পাহাড় ও মধুপুর গড় অঞ্চলের ৬ উপজেলায় চা চাষের জন্য সমীক্ষা করে। সমীক্ষার পর চা উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পঞ্চগড় থেকে চারা এনে মনিকা এগ্রো ফার্ম মুক্তাগাছার মলাজানি গ্রামে আড়াই বিঘা জমিতে গত চার বছর আগে চা চাষ শুরু করে। এটি লাল মাটির প্রথম চা বাগান। সৃজিত বাগানের চারদিকে তারের বেড়া। সার বিষ নিড়ানিসহ নিবিড় যত্নে গড়ে উঠেছে বাগানটি। বাগানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে পথ। সহজেই যাতায়াত করা যায়। বছরে দুই বার আগাছা ছাঁটাই করা হয়। রোগ প্রতিরোধে বালাই নাশক প্রয়োগের কারণে ভালো ফলন পাচ্ছে এ ফার্মটি। তবে লাল মাটির গড় অঞ্চলে চা সম্প্রসারণ, কৃষকরা যাতে সহজে সুলভ মূল্যে চারা পায়, সেজন্য তারা আন্তরিক বলে জানালেন মনিকা এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার আরিফুর রহমান।

স্থানীয়রা জানালেন, লাল মাটির মধুপুর গড়ের ভূ-প্রকৃতি কোথাও একটু উঁচু কোথাও একটু নিচু। তবে বেশির ভাগ এলাকা সমতল। সামান্য উঁচু এলাকার পাশ দিয়ে বাইদ রয়েছে। বৃষ্টির পানি সহজেই নেমে যায়। যে কারণে আনারস কলা কফিসহ নানা কৃষি ফসল চাষ হয়ে থাকে। মাটির এ বৈশিষ্ট্যের কারণে সহজেই চা চাষও হচ্ছে।

সরেজমিন মলাজানি চায়ের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চায়ের সবুজ সতেজ পাতা দোল খাচ্ছে গাছে গাছে। সারিবদ্ধভাবে গাছগুলো ছোট ছোট পাতায় ছেয়ে গেছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কচি পাতার উপর সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। রয়েছে বাগানের চারপাশে সবুজ বৃক্ষাদি। চা বাগানের ভেতরে ছায়া রাখার জন্য মাঝে মাঝে লাগানো গাছগুলো বাগানের সৌন্দর্য ও ফলনকে ত্বরান্বিত করছে। গাছের সারিগুলো লম্বালম্বি করে দেয়ায় আলো বাতাসও পাচ্ছে পরিমিত। বাগানের একপাশে পিচঢালা সড়ক অপর পাশে নিচু বাইদ চার দিকেই সবুজ কৃষি এলাকা।

লাল মাটির গড় অঞ্চল বিভিন্ন কৃষি ফসলের জন্য খ্যাতি অর্জনের পর চা চাষ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চা প্রত্রিম্নয়াজাতকরণের ব্যবস্থা হলে চাষ সম্প্রসারণ ও বাণিজ্যিক হবে- এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিকর্মী রাতুল মুন্সি।

স্থানীয় ইত্তেফাকের সাংবাদিক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন বলেন, চা উন্নয়ন বোর্ড গারো পাহাড় ও মধুপুর গড়ের সমতল এলাকায় সমীক্ষা করেছে। সমীক্ষায় ১৬ হাজার একর জমি চা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে। তারমতে, লাল মাটির এ চাষ বাগান হতে পারে চা চাষের দৃষ্টান্ত।

মনিকা এগ্রো ফার্ম ম্যানেজার আরিফুর রহমান জানান, বছর আগে চা উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে লাল মাটিতে পরীক্ষামূলক ভাবে মনিকা এগ্রো ফার্ম প্রথম চা চাষ শুরু করেছে। ফলনও ভালো পাচ্ছে। গড় অঞ্চলে চা চাষ সম্প্রসারণ, কৃষকরা যাতে সহজে চায়ের চারা নিতে পারে সে জন্য মাতৃ বাগান করেছে তারা।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা বলেন, মধুপুর গড় অঞ্চলের মাটি আবহাওয়া ভূ-প্রকৃতি চা চাষের জন্য উপযোগী। সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা পেলে মধুপুর গড়ে চা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

লাল মাটির মধুপুর গড় অঞ্চলের আনারস কলা পেঁপে কাজু বাদাম কফি আদা কচু যেমন খ্যাতি অর্জন করেছে। তেমন মাটির গুণগত মানের কারণে চা চাষও হতে পারে খ্যাতির তালিকায় অন্যতম কৃষি শিল্প বাণিজ্যিক ফসল। এ জন্য প্রয়োজনীয় ও কারিগরি সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চল হতে পারে কৃষিসমৃদ্ধ জনপদ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে স্থানীয়দের। বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে দেশ- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে