ঈশ্বরদীতে বাতাসে 'বিষের গন্ধ'

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মো. খালেদ মাহমুদ সুজন, ঈশ্বরদী (পাবনা)
পাবনার ঈশ্বরদীর একটি শিম ক্ষেত -যাযাদি
বছরজুড়েই সবজি বাজারের উষ্ণতায় পুড়ছে সাধারণ মানুষ। কেননা তীব্র দাবদাহের কারণে পুড়েছে মাঠ। নষ্ট হয়েছে শতশত একর সবজির ক্ষেত। অপরদিকে অসময়ে অতি বৃষ্টির কারণে ডুবেছে সবজির বেড। সব মিলিয়ে বছরজুড়ে বৈরী আবহাওয়াজনিত কারণে মাঠে পর্যাপ্ত সবজির চাষ না হওয়ায় যতটুকু হয়েছে ততটুকুতেই বাড়তি যত্ন করার চেষ্টা করছেন কৃষক। আর এই বাড়তি পরিচর্যা করতে গিয়ে কৃষক নিজের অজান্তেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করছে জমিতে। এতে সবজিসহ বিষের গন্ধে বাতাসও ভারী হয়ে আসছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুসারে চলতি মৌসুমে উপজেলায় মোট শিমের চাষ হয়েছে প্রায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে। কেবল এই একটি ফসলে এ অঞ্চলের কৃষক প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা আয় করেন। মৌসুমি সবজি শিম এবং ঢেঁড়সের জন্য বিখ্যাত ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি গোয়াল বাথান, মারমী, সুলতানপুর, পতিরাজপুর, শ্রীপুর, বাঘহাছলা, অরণকোলা, শেখপাড়া প্রভৃতি এলাকার মাঠ ঘুরে কাঁধে কীটনাশকের স্প্রে মেশিন দিয়ে শিমের জমিতে কীটনাশক ছিটানোর কাজে কৃষকদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি যে কয়েক জাতের শিমের চাষ হয় সেগুলো হচ্ছে রুপবান, কেরালা, অটো, চকলেট, ঘৃত কাঞ্চন প্রভৃতি। তবে এগুলোর বাইরেও দেশীয় জাতের বেশ কিছু জাতের শিমের চাষ হয় এ অঞ্চলে। মুলাডুলি এলাকার শিম চাষি রনি ইসলাম জানান, 'দীর্ঘদিন ধরে শিমের আবাদ করে আসছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন পড়েছে। কোনো কোনো দিন সকাল-বিকাল দুই বেলাই দিতে হয়েছে। নইলে পোকা লেগে যায়। এত দামের শিম পোকা খেলে আমরা খাব কি' বাঘহাছলা এলাকার শিম চাষি আহাদ বাবু জানান, 'এ বছর কীটনাশক কোনো কাজই করছে না। এত করে দিচ্ছি কিন্তু কোনোভাবেই শিমের জমি থেকে পোকা তাড়ানো যাচ্ছে না। বাজারের সব কীটনাশক ভেজাল নাকি বিষ দিতে দিতে আমরাই ক্লান্ত। এত বিষ কি দেওয়া যায়' চরমিরকামারী গ্রামের কৃষক জসিম জানান, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমি খাজনা নিয়ে অটো জাতের শিম চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি এক লাখ টাকা করে শিম বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সরাইকান্দি গ্রামের শিমচাষি লিটন জানান, বিঘাপ্রতি খরচ বাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়। বর্তমানে শিমের আবাদে নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি। বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম আবাদ করতে বীজ, সার, বাঁশ, তার, শ্রমিক, সেচ খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ হয়েছে। এবার শিমের দাম ভালো পাওয়ায় আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। তবে অতি মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষতি সম্পর্কে কৃষকদের বুঝতে হবে। নইলে পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে।