মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

চাঁদপুর নৌ-বন্দর নির্মাণে ১৬ মাসে কাজ হয়েছে ১৬ শতাংশ

চাঁদপুর প্রতিনিধি
  ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর নৌ-বন্দর নির্মাণে ১৬ মাসে কাজ হয়েছে ১৬ শতাংশ
চাঁদপুরে নানা জটিলতায় পিছিয়ে পড়া নৌবন্দর নির্মাণ কাজ -যাযাদি

শম্ভুক গতিতে চলছে চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণ কাজ। দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পের ১৬ মাস পার হলেও এখনো শেষ হয়নি পাইলিং! ধীরগতির কাজে দুর্ভোগ বাড়ছে এই বন্দর দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও দ্রম্নত সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

চাঁদপুর শহরের মাদ্রাসা রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর পাড়ে চলছে চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণ কাজের তোড়জোর। যেখানে ১৫শ' স্কয়ার মিটার এলাকায় ৪ তলাবিশিষ্ট ৩টি ভবন নির্মাণসহ স্থাপন করার কথা রয়েছে পন্টুন, গ্যাংওয়ে, পার্কিং ইয়ার্ড, এক্সটার্নাল ব্রিজ ও বন্দরে যাতায়াতের রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ। ভবন নির্মাণের জন্য করতে হবে ৩১০টি পাইলিং। ইতোমধ্যে ১৫০টির আংশিক ও ৮৬টি পুরো কাজ শেষ হলেও এরই মধ্যে কেটে গেছে ১৬ মাস। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ ২৪ মাস। ২০২৩ সালের আগস্টে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর মে মাসে। অথচ এখনো বাকি পড়ে আছে প্রকল্পের ৮০ ভাগেরও বেশি কাজ।

ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরটি আধুনিকায়নে ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পায়। এর পর থেকে উন্নত সেবার আশায় বুক বাঁধে এই বন্দর ব্যবহারকারী চাঁদপুর, লক্ষ্ণীপুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার হাজারো যাত্রী।

বিআইডবিস্নউটিএ সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২.২ একর জমিতে নির্মিত আধুনিক নৌ-বন্দর প্রকল্পের ব্যয় প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ধরা হলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ কোটিতে। যার নির্মাণ কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন।

লঞ্চযাত্রী আরশাদ আলী বলেন, 'আধুনিক নৌ-টার্মিনালের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। এখনো দৃশ্যমান কোনো কিছুই করেনি। কবে এই কাজ শেষ হবে কোনো হিসেব নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীপনায় এমন ধীরগতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। এতে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।'

আরেক যাত্রী মো. ইয়াছিন বলেন, 'অস্থায়ী এই নৌ-টার্মিনালে নেই কোনো বসার স্থান, টয়লেট কিংবা যাত্রী ছাউনি। পরিবার নিয়ে যাতায়াতের সময় বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে অসুস্থ ও নারীদের ভোগান্তি বেশি হয়। আমরা চাই দ্রম্নত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হোক।'

বিআইডবিস্নউটিএ'র জেলা বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা বছির আলী খান বলেন, 'চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন ছোট বড় অর্ধশতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করলেও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে তা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ। বন্দরের কাজ শেষ না হওয়ায় যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সময়ই তারা আমাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন। কিন্তু কাজের যে গতি তাতে কবে নির্মাণ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। আমরা চাই কাজ দ্রম্নত শেষ হোক।'

এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখনো ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন লঞ্চঘাটের ৭ জন ব্যবসায়ী। তাদের কাগজপত্র জমা দেওয়া হলেও টাকা পরিশোধ না করে নানা টালবাহানা করার অভিযোগ উঠেছে বিআইডবিস্নউটিএ'র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, লঞ্চঘাটের ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের টাকার চেক বিতরণ হলেও অজানা কারণে তাদের ৭ জন ব্যবসায়ীর ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা শুধু ঘুরাচ্ছেন। প্রায় ৩ বছর হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা।

বিআইডবিস্নউটিএ'র অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর আইয়ুব আলী বলেন, 'আমাদের এই কাজের জন্য মেয়াদ ছিল ২৪ মাস। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাস পাড় হলেও কাজ শেষ হয়েছে ১৬ শতাংশের মতো। পাইলিং কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় মাটির নিচে ১০ মিটার পর্যন্ত বোল্ডার রয়েছে। এসব কারণে পাইলিং কাজ শেষ করতে সমস্যায় পড়তে হয়। পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও বিআইডবিস্নউটিএ'র টেকনিক্যাল টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিজেল হ্যামার দিয়ে পাইলিং কাজ শুরু করি।'

তিনি আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত ৮৬টি পাইলিং কাজ পুরোপুরি ও ১৫০টি আংশিক হয়েছে। আশা করি নভেম্বর মাসের মধ্যে পাইলিং কাজ শেষ হবে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ভবনের কাজ শেষ করতে পারব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে