মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ

আ. রাজ্জাক শেখ, রূপসা (খুলনা)
  ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ
খুলনার রূপসায় আগাম জাতের সবজি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি

খুলনার রূপসায় মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষিরা শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। টানা বৃষ্টির পর জমির মাটি উর্বর থাকায় আগাম সবজি চাষ শুরু করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে এসব সবজি বাজারের অনেকটা চাহিদা পূরণ করতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।

অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে উপজেলার কৃষকদের মধ্যে। এ বছর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার পরেও থেমে নেই কৃষকদের আগাম সবজি চাষ। উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোর ব্যস্ত সময় পার করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ সবজি লাগাতে জমি প্রস্তুত করছেন। কেউ জাতভেদে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করছেন। কেউ বা সবজি ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। এক কথায় বাড়তি লাভের আশায় শীতকালীন রকমারি সবজি চাষে মাঠে মাঠে চলছে এক ধরনের কর্মযজ্ঞ।

উপজেলা জুড়ে আগাম জাতের মুলা, শিম, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, করলা, লাউ, টমেটোসহ নানা ধরনের সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। শীতের শুরুতে ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবেন এলাকার কৃষকরা। বিশেষ করে টমেটো, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন এসবের জুড়ি নেই।

রুপসা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়নের ঘেরের পাড়ে এবং পতিত জমিতে সবজি চাষ করে আসছেন কৃষকরা। তবে শীতকাল আসলে অধিক লাভের আশায় আগাম সবজিতে ব্যস্ত থাকেন তারা।

উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পদ্মবিলে শীতকালীন সবজি চাষি মো. ইউনুচ বলেন, এ বিলের সবজির চাহিদা উপজেলার সর্বত্রই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে এখন কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করে আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেও পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। এ এলাকায় সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় উৎপাদিত সবজি গুণগত মানে সেরা। তাই চাহিদাও অনেক বেশি।

জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য মুছা বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে খরচ এবং পরিশ্রম একটু বেশি হয়। তবে সময়ের চেয়ে অসময়ে সবজি বিক্রি করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা এসব সবজি চাষ করছেন। কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তিলক গ্রামে শীতকালীন সবজির বাজার ধরতে ফুলকপি, টমেটো ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন কৃষক সবুজ হাওলাদার। তিনি বলেন, কার্তিক মাসের শেষ দিকে তাদের সবজি বাজারে উঠবে।

উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমান্দ্রী বিশ্বাস বলেন, কৃষকরা যে ফসলে মুনাফা পান, সেটাতেই ঝুঁকে পড়েন। আগাম সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষক যাতে ভালো ফলন পান সে জন্য কৃষিবিভাগ সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তরুন কুমার বালা বলেন, এ বছর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। বৃষ্টির পর থেকে কৃষকরা আগাম শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু করেছেন, যা এরই মধ্যে বাজারে উঠেছে এবং কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। আগাম শীতকালীন সবজি চাষে একটু ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন্য কৃষকদের সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার, জৈব সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারের জন্য মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে