বাংলাদেশের বৃহত্তম চারটি নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র একটি। গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ৭ কিমি পূর্বদিকে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় গাইবান্ধার একমাত্র নৌবন্দর বালাসীঘাট।
জানা যায়, যমুনা সেতুর ওপর চাপ কমাতে তৎকালীন সরকারের সময় ২০১৭ সালে বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত ফেরি চলাচলের উপযুক্ত করতে ১৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়। ফেরিঘাটের অবকাঠামো নির্মাণ ও রুট খনন প্রকল্পের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ। পরে প্রকল্পের বাজেট বৃদ্ধি করে ১৪৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। এতবড় অঙ্কের টাকার প্রকল্পটি ফেরি চালুর আগেই বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরাঞ্চলের বিশেষ করে রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষের স্বপ্ন মুখ থুবরে পড়ে।
প্রকল্পের কার্যক্রম জনসম্মুখে দেখার জন্য বালাসীঘাট থেকে বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত নৌপথে পরীক্ষামূলক লঞ্চ চালু করা হয়। কিন্তু নদীর নাব্য সংকটের অজুহাতে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। বালাসীঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত নৌপথের প্রকল্পটি নির্মাণের ৫ বছরেই অচল হওয়ায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ফেরিঘাট টার্মিনালটি।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেরির পরিবর্তে চারটি লঞ্চ দিয়ে বালাসী থেকে জামালপুর যাতায়াত শুরু হয়। নাব্য সংকটের কথা বলে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এ পথে লোকজন কম আসায় বন্ধ হয়ে গেছে ছোট-বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার কারণে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ২০২১ সালে স্থাপনা নির্মাণকাজ শেষ হলে বিআইডবিস্নউটিএ'র কারিগরি কমিটি ২৬ কিলোমিটার দূরত্বের নৌপথে নাব্য সংকটের সমস্যার কথা তুলে ধরে চলাচলের অনুপযোগী বলে প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও নদীর মরফোলজিক্যাল অবস্থা না জেনে দুই পাড়ে আধুনিক দুটি ঘাট নির্মাণ করায় বালাসী ও বাহাদুরাবাদের দুই প্রান্তের ফেরিঘাট অন্যত্র স্থানান্তর করতে সুপারিশ করা হয়। অতঃপর ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল নৌপথটি উদ্বোধন করেন সাবেক নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রেজিংয়ের সময় বালু উত্তোলন করে দূরে না ফেলে নদীতে ফেলা হয়। নামমাত্র ড্রেজিং করে সরকারের অর্থ অপচয় করা হয়েছে। ফেরিঘাটে এখন সুনসান নীরবতা, নান্দনিক স্থাপনাসহ খাবার হোটেল, আনসার ব্যারাক, মসজিদ, টোল আদায় বুথ, বাস টার্মিনাল এবং ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়সহ সব স্থাপনাগুলো যেন পরিত্যাক্ত! বালাসী ঘাটে নৌকার যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন আগেও এই পথে লঞ্চে নিরাপদে যাতায়াত করেছিলেন। এখন এসব যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করছেন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম গাইবান্ধা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহনেওয়াজ খান বলেন- সরকারের এত টাকা ব্যয় করে তৈরি করা নৌরুট বন্ধ থাকবে এটি মেনে নেওয়া যায় না। লুটপাট করার জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তদন্ত সাপেক্ষে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বালাসী বাহাদুরাবাদ নৌঘাটটি চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিআইডবিস্নউটি'র বন্দর ও পরিবহণ বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম আরিফ উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত পরিচালক (নৌপথ) মো. আব্দুস ছালাম বলেন- 'আমি এসব দেখি না, পোর্ট দেখে।' বিআইডবিস্নউটিএ ডিডি রবি বলেন, দ্রম্নততম সময়ে বালাসী- বাহাদুরাবাদ নৌরুটটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।