দুর্বৃত্তদের হাতে প্রবাসীর স্ত্রী, মেয়ের হাতে বাবা ও শ্বশুর বাড়িতে জামাই খুন

শ্রীপুরে যুবকের মরদেহ উদ্ধার গৌরীপুরে একদিনে ৩ অস্বাভাবিক মৃতু্য

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে দুর্বৃত্তদের হাতে প্রবাসীর স্ত্রী, ময়মনসিংহের ভালুকায় মেয়ের হাতে বাবা ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জে শ্বশুরের হাতে জামাই নিহত হয়েছেন। অন্য দিকে, গাজীপুরের শ্রীপুরে যুবকের মরদেহ উদ্ধার ও ময়মনসিংহের গৌরীপুরে একদিনে তিনজনের অস্বাভাবিক মৃতু্য হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-! সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে দুর্বৃত্তদের হাতে লিপি আক্তার (৩৫) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী খুন হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার উত্তর মালপদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিপি ওই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আওলাদ হোসেনের স্ত্রী ও একই উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের নাইসিং গ্রামের নুরুল শেখের মেয়ে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বসতঘরের বাইরে বাথরুমে যান লিপি। ঘরের দরজায় শিকল দেওয়া ছিল। ভেতরে ছিল তার ৭ বছরের ছেলে মো. মুস্তাকিম ও ৩ বছরের মেয়ে আয়েশা আক্তার। ৯ বছরের বড় মেয়ে আসফিয়া নানা বাড়িতে ছিল। বাথরুম থেকে মায়ের ফিরতে দেরি হওয়ায় ছেলেমেয়ে ঘরের ভিতর চিৎকার করতে থাকে। চিৎকারের শব্দ শুনে স্থানীয়রা এসে ঘরের বাইরে লিপির দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ পাঠায়। নিহতের মা জাহানারা বেগম জানান, কি কারণে তার মেয়ে খুন হলেন, কে বা কারা করেছে তিনি জানেন না। তবে পাশের বাড়ি হোসেন কসাই ও তার ভাই শহিদ কসাইর ছেলে তকিবের সঙ্গে ঝগড়া ছিল। তিনি তাদের সন্দেহ করেন। সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কি কারণে খুন করা হয়েছে- তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের বীরগঞ্জে শ্বশুর বাড়িতে এসে শ্বশুরকে কুপিয়ে আহত করার সময় শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জামাই সর্ধেন শীল (৪৫) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শ্বশুর বিজয় শীলকে (৭৫) আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত সর্ধেন শীল ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দেওধা গ্রামের মৃত কর্ম শীলের ছেলে এবং আহত বিজয় শীল দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের লক্ষ্ণীপুর গ্রামের মৃত টুনি শীলের ছেলে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের লক্ষ্ণীপুর গ্রামে শ্বশুর বিজয় শীলের বাড়িতে এ সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। বীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল গফুর জানান, সর্ধেন শীলের নির্যাতনে তার স্ত্রী বাবা বিজয় শীলের বাড়িতে চলে আসেন। মঙ্গলবার রাতে সর্ধেন বীরগঞ্জে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে ডাকলে শ্বশুর বিজয় শীল দরজা খুলে দেন। দরজা খোলা মাত্র সর্ধেন শীলের হাতে থাকা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিজয় শীলকে এলোপাতাড়ি কোঁপাতে থাকেন। এ সময় বিজয় শীলের আত্মচিকারে পরিবারের লোকজন এবং প্রতিবেশীরা আসলে সর্ধেন শীল তাদের ওপর চড়াও হন। এতে উভয়ের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুত্বর অবস্থায় শ্বশুরকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং জামাইকে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে পাঠান। পরে চিকিৎসক জামাই সর্ধেন শীলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ লিখিত অভিযোগ করেনি এবং কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের ভালুকায় মেয়ের হাতে খুন হলেন বাবা শফিকুল ইসলাম (৫৫)। মঙ্গলবার রাতে পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ড কাঁঠালি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, রাতে মেয়ে শরিফা (৩৫), তার ছেলে রুদ্র (১৫) ও স্বামী সোহেল (৪০) জোরপূর্বক গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বাবা শফিকুল বাধা দেন। তখন মেয়ে-জামাই-নাতিসহ আরও অজ্ঞাত কয়েকজন শফিকুলকে লাঠি দিয়ে মাথা, কপাল, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। আশপাশের লোকজন শফিকুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠান। পরে ময়মনসিংহ হাসাপাতালে নিলে সেখানে রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ভালুকা মডেল থানার ওসি সামছুল হুদা জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে মেয়ে শরীফা, তার স্বামী সোহেল ও ছেলে রুদ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে থাকার ঘর থেকে রবিন মিয়া (২৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার ভোর রাতে লাশ উদ্ধার হয়। এর আগে, রাত ১টা থেকে ৩টার মধ্যে উপজেলার মুলাইদ গ্রামের মো. শাহজাহানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রবিন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ সদরের আবুল হাসেমের ছেলে। তিনি শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামে ভাড়া থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। স্থানীয়রা জানান, রাতে ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন রবিন। ৩টার দিকে তার সাড়া পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পান ঘরের ধর্ণায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আছে রবিনের নিথর দেহ। এরপর থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মঙ্গলবার একদিনে তিনজনের অস্বাভাবিক মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন গৌরীপুর থানার ওসি মীর্জা মাযহারুল আনোয়ার। তিনি জানান, দৌলতপুর এলাকার চান মিয়া ও কলতাপাড়া এলাকা থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃতু্যর রহস্য উদঘাটনে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পৌর শহরের কলাবাগান এলাকায় জয় কুমার সিংহের লাশ তার মায়ের আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো অভিযোগ না থাকায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার ৮নং ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া বড়বাড়ি থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসের (১৯) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি বিপুল মিয়ার স্ত্রী। নিহতের বাবা ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মহজমপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে আব্দুল লতিফ জানান, 'আড়াই বছর আগে আমার মেয়ের সঙ্গে বিপুল মিয়া বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে।' অন্যদিকে উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের চান মিয়া (৫৫) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে মৃতু্যবরণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওয়ার্ড মেম্বার ওয়াসিম আকন্দ। সূত্র জানায়, শনিবার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন দৌলতপুর গ্রামের মৃত আলী হোসেনের ছেলে চাঁন মিয়া (৫৫)। স্বজনরা উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এদিকে উপজেলা পৌর শহরের কালিপুর মধ্যম তরফ (কলাবাগান) মহলস্নার এলাকায় জয় সিংহ (২৫) নামে একজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি মৃত রতন কুমার সিংহের ছেলে। গত সোমবার রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।