খুলনার পাইকগাছায় গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা শিবসা নদী। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের মধ্যেই ১৫-২০ বছর ধরে সীমাবদ্ধ রয়েছে নদীর ভরাট হওয়া অংশের খননের কাজ। কর্তৃপক্ষের নিরবতার কারণে নদী ভরাটের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে ভূমিদসু্যরা।
উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত এক সময়ের খরস্রোত প্রমত্তা শিবসা নদী। যার একূল থেকে ওকূল দেখা যেত কুয়াশার মতো। এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে যেতে হলে নদী পারাপারের কোনো বিকল্প ছিল না। ছিল খেয়াঘাট ও লঞ্চঘাট। ঘাটে থাকত সারি সারি খেয়া নৌকা ও জলদি নৌকা। প্রচন্ড ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে নৌকা চড়তে হতো সে সময়। এমনকি পালতোলা নৌকাও চলত এ নদীতে। এ ছাড়া দিন-রাত চলত লঞ্চ, কার্গো, গানবোট, স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান। কয়রা- পাইকগাছা ও বড়দল এলাকার লোকজন এ নদী পথেই খুলনা ও মোংলা বন্দরে যাতায়াত করতেন। এখন সবকিছুই শুধু স্মৃতি। বর্তমানে নদীতে সাধারণ জনগণ হেঁটে চলাচল করছে। বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে।
এদিকে পৌরসভায় শহর রক্ষা বাঁধের নামে নদীর মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করে অনেকেই শত শত বিঘা দখল করে নিয়ে চিংড়ি চাষ করছে। তৈরি করেছে বাড়িঘর ও স্থাপনা। শিববাটী ব্রিজ থেকে হাড়িয়া পর্যন্ত শিবসা নদীর ১৫ কিলোমিটারের সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অনেক লেখালেখি, আন্দোলন-সংগ্রামও হয়েছে। বিভিন্ন সময় তৎকালীন সংসদ সংসদ্যরা আশ্বাস দিয়েছেন, 'এই তো টাকা বরাদ্দ হয়েছে, শিগগিরই খনন শুরু হবে।' এই শুনতে শুনতে ১৫ থেকে ২০ বছর চলে গেছে। সবকিছুই তাদের আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
নৌকার মাঝি হাজু দাশ জানান, 'বাবার হাত ধরে নৌকার মাঝি হয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। মানুষ পার করে সংসার চলত। এখন নদী নেই, আয়-রোজগার কমেছে। সে কারণে আমাদের পেশা বদল করতে হয়েছে।'
শামসুর মাঝি জানান, 'দেশ স্বাধীনের পর থেকে খুলনা থেকে পাইকগাছা বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়া করছি। এখন নদী ভরাট হওয়ার কারণে অনন্ত ২০ কি.মি. বেশি ঘুরে মালামাল শিববাটী ব্রিজের নিচে নামাতে হয়। ফলে মালামাল পরিবহণে খরচ বাড়ছে। নদী খনন হলে পাইকগাছার ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।'
পাইকগাছার সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এফএমএ রাজ্জাক জানান, শিবসা নদীটি এ অঞ্চলের মানুষের এখন গলার কাটা। ভূমিদসু্যরা চর ভরাটী জমি দখল করে নিচ্ছে। অচিরেই নদীটি খনন করা প্রয়োজন।
পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, 'আমরা শিবসা খননের জন্য প্রায় ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করছি। অচিরেই এ নদী খনন করতে না পারলে শিবসা নদী মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। পৌরবাসী বন্যায় আক্রান্ত হবে।
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার জানান, নদী খনন না হওয়া পর্যন্ত এ সমাস্যা সমাধানের কোনো উপায় নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারকে বারবার অবহিত করা হয়েছে।
পাইকগাছা ইউএনও মাহেরা নাজনীন জানান, আমি নিজেও দেখেছি শিবসা নদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। খনন করা জরুরি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'