চাঁদপুরে ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম ইলিশের আড়ত

ডিম ছাড়ার পর চলছে গবেষণা

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠেছে মাছের আড়ত। অন্যদিকে, ফেরিঘাট সংলগ্ন মাছের আড়তে ডিম ছেড়ে দেওয়া ইলিশ পরিমাপ করছেন মৎস্য বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা সহকারী -যাযাদি
মিঠা পানিতে ইলিশের প্রজনন রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে রোববার মধ্য রাতে। এরপরই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ অন্য মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ধরে আনা ইলিশ জেলেরা বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছেন নদী উপকূলীয় আড়তগুলোতে। তিন সপ্তাহ পরে আবারও ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠেছে আড়তগুলো। নিষেধাজ্ঞার আগের চাইতে ইলিশের দামও এখন কিছুটা কম। এদিকে, নিষেধাজ্ঞার সময় এবং বর্তমানে চলছে ইলিশ গবেষণা কার্যক্রম। সোমবার ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, আড়তগুলোতে ইলিশ নিয়ে আসছেন জেলেরা। আবার অনেক জেলে নৌকা ও জাল নিয়ে পদ্মা-মেঘনায় বেরিয়ে পড়ছেন। বরফ ছাড়া এসব ইলিশ জেলেদের উপস্থিতিতে হাকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন আড়তদাররা। মুহূর্তের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ইলিশ। পাশাপাশি পাঙ্গাস মাছও বিক্রি হচ্ছে। তবে সংখ্যায় কম। সদরের হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে মো. শরীফ বলেন, ইলিশ ধরতে ভোর রাতে মেঘনায় এক নৌকায় তারা তিনজন নেমেছেন। তাদের পাওয়া ছোট-বড় ইলিশ বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকায়। কিছু সময় বিরতি দিয়ে আবারও নামবেন নদীতে। নরসিংদী জেলা থেকে তাজা ইলিশ কিনতে এসেছেন কয়েকজন যুবক। তাদের মধ্যে মোস্তাক নামে একজন বলেন, এর আগেও হরিণা মাছঘাটে এসেছেন। তাজা ইলিশ কিনতে এবারও এসেছেন তারা। এ ঘাটের ইলিশে কোনো ভেজাল নেই। ছোট-বড় ১৩ হাজার টাকার ইলিশ কিনেছেন। দামও ভালো পেয়েছেন। পাঙ্গাস মাছের পাইকারি বিক্রেতা কালু পাটোয়ারি বলেন, গত বছর এ সময় ইলিশের জালে অনেক পাঙ্গাস ধরা পড়ে। এ বছর খুবই কম। আজ (সোমবার) ছোট সাইজের পাঙ্গাস প্রতি কেজি ৭০০ এবং বড় সাইজের বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। জেলেদের ধরে আনা প্রতিটি পাঙ্গাসের ওজন ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৮ থেকে ১০ কেজি। ঘাটের আড়তদার সেলিম সৈয়াল বলেন, 'আমাদের এ ঘাটে ইলিশ হালিতে বিক্রি হয়। ছোট সাইজের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। মাঝারি সাইজের (৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজন) এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা।' আড়তের সবচেয়ে প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, সকাল থেকেই জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসছেন। তবে সাইজ ছোট। বড় ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিন পার হলে বোঝা যাবে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের বিচরণ কী পরিমাণ আছে। ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান ইলিশের প্রাপ্যতা সম্পর্কে বলেন, ইলিশ পরিভ্রমণশীল মাছ। বছরজুড়েই ইলিশ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এই সময় সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। তবে ইলিশের চলার পথ সুগম করলে নদীতেও বছরজুড়ে ইলিশ পাবেন জেলেরা। এছাড়া প্রজননের জন্য সাগর থেকে নদীতে আসা ইলিশ নিয়ে প্রতিবছরই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কাজটি করেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের গবেষকরা। এ বছরও পদ্মা-মেঘনা নদীতে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন জেলার প্রায় ৭০ কিলোমিটার নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞার সময় এবং বর্তমানে চলছে ইলিশ গবেষণা কার্যক্রম। সোমবার সকাল ৮টায় সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট সংলগ্ন মাছের আড়তে ডিম ছেড়ে দেওয়া ইলিশের পরিমাপ করতে দেখা যায় মৎস্য বৈজ্ঞানিক ও একজন গবেষণা সহকারীকে। এই আড়তে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরে সরাসরি নিয়ে আসে আড়তে। যে কারণে ইলিশের প্রকৃত অবস্থান জানার জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন মৎস্য গবেষকরা। এই ঘাটে প্রায় ১০টি আড়তে ইলিশ বিক্রি হয়। জেলেদের ধরে আনা ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের ইলিশের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ওজন পরিমাপ করেন তারা। কী পরিমাণ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। কী পরিমাণ ডিমসহ ধরা পড়ছে। ছোট সাইজের ইলিশ ডিম ছাড়ছে কিনা তাও জরিপ করা হচ্ছে। হরিণা মাছঘাটে প্রায় এক ঘণ্টা ইলিশের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মৎস্য বৈজ্ঞানিক রিজভী কায়সার ও গবেষণা সহকারী আব্দুস সালাম। জানা গেছে, প্রতিবছর এই সময়ে জেলার মতলব উত্তর উপজেলা থেকে শুরু করে সদর ও হাইমচর উপজেলার নদী উপকূলীয় এলাকার আড়তগুলোতে এই জরিপ কার্যক্রম চলে। গবেষণার জন্য নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষকরা তাদের নিজস্ব জাহাজে করে অভয়াশ্রম এলাকায় নিজস্ব ইলিশ মাছ ধরার ফাঁদ দিয়ে ইলিশ ধরে গবেষণা কার্যক্রম করেন। মৎস্য বৈজ্ঞানিক রিজভী কায়সার বলেন, 'আজ চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, হরিণা ফেরিঘাট ও হাইমচরের কয়েকটি আড়তে ইলিশের অবস্থান সম্পর্কে জরিপ করা হচ্ছে। আমাদের এ কাজের ফলাফল সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি নেই। তবে কার্যক্রমের ফলাফল আমাদের প্রধান মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে পাঠাবেন। এটি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়।