কৃষিনির্ভর দেশে সরকার যখন ফসল উৎপাদনে নানাভাবে কৃষকদের উৎসাহিত করছে, ঠিক এমন সময় খোদ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে সেচ কাজে পস্নাস্টিক পাইপের ড্রেন মাটির নিচ থেকে তুলে ফেলার নোটিশ দিয়েছেন দলদলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক চুটু।
এই পদক্ষেপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের মোহম্মদপুর চিলার বিল, রাঙাম্যাইটার হাজার বিঘা জমির ধান, সবজি ও মৎস্য চাষ উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সেচ সুবিধাবঞ্চিত এলাকার কৃষকরা। এর প্রতিবাদে দলদলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চেয়ারম্যানের ড্রেন তুলে ফেলার হুমকি দিয়ে নোটিশের প্রতিবাদে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে স্থানীয় কৃষক মো. সালাউদ্দিন, আব্দুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুলস্নাহ, আব্দুল লতিফসহ অন্যরা বক্তব্যে বলেন, 'দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সরকার যখন ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে চাপ কমাতে ভূ-উপরস্থ পানি দিয়ে ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করছে কৃষককে, ঠিক এমন সময় ভোলাহাট ইউএনও তাহমিনা আক্তার দলদলী ইউপি চেয়ারম্যানকে দিয়ে দলদলী গ্রামে মহানন্দা নদী থেকে ভূ-উপরস্থ পানি উত্তোলনের সেচ কাজে বাধা সৃষ্টি করতে নোটিশ পাঠিয়েছেন।'
এ সময় স্থানীয় কৃষকরা আরও অভিযোগ করেন, 'মহানন্দা নদীর পানি দিয়ে মোহম্মদপুর মৌজার প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হবে। ২০০-৩০০ বিঘা আমবাগান সেচ সুবিধা পাবে। মৎস্য চাষ হবে। দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ স্থাপনে আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের। ফলে ভূ-উপরস্থ মহানন্দা নদীর পানি দিয়ে ফসল ফলাতে দলদলী গ্রামের মৃত আকবর আলির ছেলে আব্দুল করিমের প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করে প্রায় ৫০০-৬০০ ফিট পস্নাস্টিক পাইপ দিয়ে ড্রেন মাটির নিচ দিয়ে ধান ক্ষেতের মাঠে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন কৃষকরা।
তাদের অনুরোধে একটি সরকারি সোলিং রাস্তার পাশ দিয়ে ৩-৪ ফুট গর্ত করে পস্নাস্টিক পাইপ দিয়ে ড্রেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪২ জন কৃষকের স্বাক্ষরিত ড্রেন নির্মাণের অনুমতি চেয়ে ৮ জুলাই ইউএনও তাহমিদা আক্তার বরাবর একটি আবেদন করেন কৃষক আব্দুল করিম। আবেদন করলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সেচ সুবিধা পেতে এলাকার কৃষকরা পস্নাস্টিক পাইপের ড্রেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ড্রেন নির্মাণ করে ফেলেন। একই সঙ্গে রাস্তা মেরামত করেন।
এ সময় ইউএনও গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থলে গিয়ে এক্সকেভেটর মেশিন ও ৫০টি পস্নাস্টিক পাইপ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক চুটুর উপস্থিতে গ্রামপুলিশের জিম্মায় রেখে আসেন এবং মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে আসছেন।
কৃষকের তোপের মুখে চেয়ারম্যান কৃষকদের ইউএনও'র সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবির কথা বলার পরামর্শ দেন। চেয়ারম্যানের পরামর্শে দেড় শতাধিক কৃষক ইউএনও'র সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি দেখা করেননি। বিশাল কৃষক জনগোষ্ঠীর কৃষি কাজে সহায়তা করতে বেশ কয়েক দফা বিভিন্ন মহল থেকে সুপারিশ করলেও কোনো পাত্তাই দেননি ইউএনও তাহমিদা আক্তার।
এ ব্যাপারে দলদলী ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক চুটু বলেছেন, 'এককভাবে সেচ কাজ করতে দেওয়া যাবে না। এলাকার কৃষকরা যদি সেচ কাজ পরিচালনা করে, তবে করতে পারবে।'
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। কৃষকরা যদি চায়, তবে আমি দেখব।'