চুইঝাল এক প্রকার লতাগুল্ম। দেখতে পানের লতার মতো। পাতা কিছুটা লম্বা ও পুরু। বৈজ্ঞানিক নাম চরঢ়বৎ ঈযধনধ। পিপারাসি পরিবারের সম্পূূক লতা চই। এর কান্ড ও লতা কেটে ছোট ছোট টুকরো করে মাংস রান্নায় ব্যবহার করা যায়। ঝাল স্বাদের এই চুইয়ের রয়েছে আলাদা স্বাদ ও ঘ্রাণ। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা বিভাগের রন্ধনশৈলীতে চুইঝালের ব্যাপক ব্যবহার হয়।
গাইবান্ধা জেলায় অনেকেই বাসা-বাড়িতে ছাদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ও মরিচের বিকল্প হিসেবে চুই গাছের চাষ করছে। এটি এক ধরনের লতা জাতীয় শাক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিজা ও সঁ্যাতসঁ্যাতে মাটিতে এই লতার বৃদ্ধি ঘটে। লতার প্রত্যেকটি গাঁট থেকে শেকড় বের হয়। কান্ড কোমল ও রসযুক্ত। ছোট আকৃতির ঝোপালো লতা এটি। শাক হিসেবে মানুষ খেয়ে থাকে। শিশুদের কফ, কাঁশি, বসন্ত রোগ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, স্বরভঙ্গ ও বসন্ত রোগে গ্রামীণ মানুষরা ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। উপকারভোগী অনেকের সঙ্গে কথা বলে চুই গাছের এসব গুণাগুণ সম্পর্কে জানা যায়।
মূলত রান্নার জন্য চুইঝালের কান্ড ব্যবহার করা হয়। চুইঝালে দশমিক ০৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে, আরও রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গস্নাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গস্নুকোজ, ফ্রুকটোজি, সিজামিন ও পিপলাস্টেরল। চুইয়ের শেকড়ে রয়েছে ১৩.১৫ শতাংশ পিপারিন। খাবারের রুচি বাড়াতে, ক্ষুধামন্দা, ক্যানসার প্রতিরোধে, হৃদরোগ, পাকস্থলির সমস্যা, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে চুইঝাল ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে প্রতিবছর বর্ষাকালে মরিচের দাম ৬০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করে। মরিচের বিকল্প হিসেবে চুইঝাল চাষে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র লাভবান হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে চুইঝালের গুণাগুণ অবগত করাসহ জনপ্রিয়তা বাড়লে দেশের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে ভেষজ গুণাগুণ থাকার কারণে অনেক রোগব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার অধ্যাপক তপন কুমার বর্মণের বাড়িতে বেশ কয়েকটি সুপারির গাছে চুই গাছ লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন, মরিচ না থাকলেও রান্নার কাজে চুইগাছের কান্ড ব্যবহার করেন। ফলে বাজারে মরিচের দাম বাড়ল কি কমল, এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন নন। চুই চাষের জন্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। পরিত্যক্ত জায়গায় এর চাষ করা যায় এবং লাভজনক।
সরেজমিন দেখা যায়, গাইবান্ধা জেলায় প্রতিবছর কালীপূজা আসলে গ্রাম ও শহরের বাজারে চুইগাছের লতা কান্ড বিক্রি করতে দেখা যায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা ঝালের গুঁড়া-ভূতের গুঁড়া নামক এক প্রকার লোকখাদ্য তৈরিতে চুইঝালের ব্যবহার করে থাকেন। জেলায় স্বল্প পরিসরে চুইঝালের চাষ হলেও বিচ্ছিন্নভাবে অনেকেই বাড়ির ভিটা ও ছাদে চুই গাছ চাষ করছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, জেলায় প্রায় আট হেক্টর জমিতে চুইয়ের চাষ হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় প্রকল্প আকারে এর চাষ হচ্ছে। তবে মরিচের বিকল্প হিসেবে চুই চাষ প্রসারে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে উদ্ধুব্ধ করা হবে।