পটুয়াখালীতে একদল শিক্ষার্থী কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সবজি কিনে একই দামে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী বাজার বসিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করছেন। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গত কয়েকদিন থেকে চালু হওয়া এ সস্তার বাজার ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও কম দামে শাকসবজি কিনতে পারছেন। পাশাপাশি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমে এসেছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যখন অসহনীয়, সাধ আর সাধ্যের মিল করে নিম্ন আয়ের মানুষ যখন তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন, ঠিক সে সময় কৃষকের দামেই শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে 'পটুয়াখালীবাসী' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এ সংগঠনের সদস্যরা গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সবজি কিনে তা পটুয়াখালী শহরের বিভিন্ন এলাকায় একই দামে বিক্রি করছেন। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ কম দামে শাকসবজি কিনতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
গত কয়েকদিনে পটুয়াখালী শহরের শহীদ আলাউদ্দিন শিশুপার্ক, লঞ্চঘাট, কাঠপট্টিসহ বেশকিছু জনবহুল ও নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি বসবাস করে এমন এলাকায় এই বাজার বসানো হচ্ছে। প্রতিদিনই লাউ, লাউশাক, পুঁইশাক, পটোল, পেঁপে, ঝিঙা, কাঁচকলা, ডিম, দুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় শাকসবজি বিক্রি হয়।
কাঠপট্টি এলাকার রহিমা বেগম বলেন, 'বাজারে সব কিছুর দাম অনেক বেশি। তবে আজ কিছুটা কম দামে সবজি কিনলাম। এখান থেকে লাউশাক কিনেছি ৪০ টাকায়, যা বাজারে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বাজারে প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও এই বাজারে বিক্রি করছে ৫০ টাকায়। প্রতি হালি কাঁচকলা স্থানীয় বাজারে ৪০ টাকা করে বিক্রি করলেও আমরা ছাত্রদের এই সস্তার বাজার থেকে কিনেছি ২০ টাকা করে।'
'পটুয়াখালীবাসী' সংগঠনের সভাপতি মাহমুদুল হাসান রায়হান বলেন, 'নিয়মিত এই বাজার বসাতে আমাদের খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় না। একেকদিন শহরের একেক এলাকায় বাজার বসানো হয়। আগে থেকেই আমরা জানিয়ে দেই আগামীকাল কোথায়, কখন বাজার বসবে। কৃষকদের মাঠ থেকে যেদিন যে দামে যে পণ্য কিনে থাকি, সে দামেই বিক্রি করা হয়। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা কাজ করেন। পাশাপাশি আমরা নিজেরাই পরিবহণ ব্যয় বহন করি। আর এ থেকে অনেক বেশি মানুষের উপকার করা যাচ্ছে। আমরা মূলত বাজারে যে সিন্ডিকেট কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীরা আছে তাদের বাদ দিয়ে সরাসরি কৃষক এবং ভোক্তাকে মিল করিয়ে দিচ্ছি।'
এর আগেও করোনা মহামারির সময় বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া, অসুস্থ রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহসহ রমজান মাসে সড়কের পাশে পথচারীদের জন্য ইফতার সাজিয়ে রাখার মতো মানবিক কাজ করে পটুয়াখালীবাসী নামের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি, যা জেলা এবং জেলার বাইরে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।