১৫ মাস বন্ধ থাকার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে সরকার ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত 'পাড়াকেন্দ্র' প্রকল্প আবারও শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে সফলতার সঙ্গে পরিচালিত এ প্রকল্পটি পুনরায় শুরু হওয়ায় প্রত্যাশা বাড়ছে এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, 'পাড়াকেন্দ্র' প্রকল্পটি বিশেষ করে পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলের শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, যেখানে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহজলভ্য নয়। তবে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৫ মাস বন্ধ থাকায় শিক্ষা সেবায় ব্যত্যয় ঘটে, যা শিশুরা এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পাহাড় বিশ্লেষকরা বলছেন, এ প্রকল্পের পুনরায় কার্যক্রম শুরু হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও প্রাথমিক শিক্ষার ভিত আরও মজবুত হবে। প্রকল্পটি বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠার আশাও করছেন তারা।
জানা গেছে, প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার পর দীর্ঘ ১৫ মাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সময়টাতে প্রকল্পটির আওতাধীন বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর লোকজন। এটি মূলত পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচালিত হতে থাকে। পাহাড়ের এসব পাড়াকেন্দ্রকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার বাতিঘর মনে করেন অনেকেই। অবশেষে পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদে নতুন করে চালু হচ্ছে পাহাড়ের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার বাতিঘর খ্যাত পাড়াকেন্দ্র।
এদিকে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৪ হাজার ৮০০টি পাড়াকেন্দ্র প্রান্তিক অঞ্চলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়নে কাজ করে আসছিল। দীর্ঘদিন পর প্রকল্পটি আবারও চালু হওয়ায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও প্রান্তিক মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। চলতি অর্থবছরের ৩ মাস পর অর্থাৎ অক্টোবর থেকে প্রকল্পটি শুরু হওয়ায় ২০২৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ করা হয়েছে।
পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা জিওবি ও ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে ইউনিসেফ। চলতি বছরের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ।
ক্লাস্টারের মাঠ সংগঠক ও পাড়া কর্মীরা বলেন, 'আমরা মূলত দুর্গম এলাকাগুলোতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টিবিষয়ক সেবা দান করে থাকি। পাশাপাশি বাড়ি পরিদর্শন ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের পরামর্শ দেই।'
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রিপন চাকমা জানান, একনেক সভায় অক্টোবর থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পটির পুনরায় শুরু হচ্ছে। তবে এখনো প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করবে।