শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
নাটোরে সড়ক যেন জলাশয়!

অপরিকল্পিত পুকুরে আশঙ্কাজনক হারে কমছে ফসলি জমি

নাটোর প্রতিনিধি
  ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অপরিকল্পিত পুকুরে আশঙ্কাজনক হারে কমছে ফসলি জমি

দেখে জলাশয় মনে হলেও তা জলাশয় নয়। এটা জেলার আহমেদপুর-বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর মহাসড়ক। এ সড়কের দুইপাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সেই মাঠ থেকেই কৃষকের ঘরে ওঠে বছরের খাদ্যসশ্য ও অর্থকরি ফসল। কিন্তু সম্প্রতি মাঠের মধ্যে অপরিকল্পিত পুকুর খননে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট এবং অনেক পুকুর, ঘড়বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠ। জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় কৃষকরা মানববন্ধন করে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবিও করেছেন।

উপজেলার জোয়াড়ী ইউনিয়নের নওদাজোয়ারীর স্থানীয় কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করে মূল পানি প্রবাহের জলাশয় বন্ধ করা হয়েছে। ফলে চারটি বিলের পানি বের হতে না পেরে তা রাস্তা ও কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। সরকারিভাবে ভারী ড্রেন করে বড়াল নদীতে পানি প্রবাহের সংযোগ করা হলে স্থায়ী সমাধান হবে।

নাটোর সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় তাদের মোট ১৯টি সড়ক রয়েছে। তার মধ্যে চারটি জাতীয় মহাসড়ক, দুইটি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং তেরটি জেলা সড়ক। আহমেদপুর-বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর জেলা মহাসড়কটির ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, আহমেদপুর থেকে গুরুদাসপুরে গিয়ে শেষ হয়েছে, যার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে আসছে সড়ক বিভাগ।

সড়ক ও জনপথ নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সরকার জানান, সড়কের বিভিন্ন স্থানের ইট-খোয়া ও কার্পেটিং উঠে অসংখ্য খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে মৌখাড়া থেকে নওদাজোয়ারী ৪ কিলোমিটার সড়ককে ঢালাইয়ের মাধমে সংস্কার করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

অন্যদিকে গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, গত ১৩ বছরে এ উপজেলায় ফসলি জমি কমেছে ১ হাজার ৫১০ হেক্টর। কমে যাওয়া এসব জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে শুধু গাড়িষাপাড়া আর বামনকোলা বিলসহ অন্তত ২০টি বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। মারাত্মক ফসলহানির মুখে পড়েন কৃষক।

উপজেলার বামনকোলা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, বামনকোলা বিলের পাঁচ বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছেন। এখন জলাবদ্ধতার শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে। অথচ একই জমিতে একসময় তারা বছরে তিনটি ফসল উৎপন্ন করতেন। পুকুর খননের ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় তার জমিটি পানির নিচে থাকে।

স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন, গৃহিণী আসমা বেগমসহ অন্তত ১০ জন ভুক্তভোগী জানান, পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা করা হলে বিলের জমিতে তারা আগের মতো তিন ফসল চাষ করতে পারবেন। এ কারণে তারা উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে মানববন্ধন করেছেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, দুইটি বিলের অন্তত একশ' বিঘা জমির রোপা আমন ধান পানির নিচে রয়েছে। প্রতি বছরই এই দুই বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, কৃষকের স্বার্থে পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা করে বিল দুইটিকে তিন ফসলি করার জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।

বড়াইগ্রাম পৌর প্রশাসক ও ইউএনও লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, 'বিভিন্ন জায়গা থেকে জলাবদ্ধতার খবর পেয়ে তদন্ত করেছি। সরেজমিনে জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে এলাকার লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছে, যেন অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন বন্ধ করেন এবং বাড়িঘর তৈরি করার সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে