শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

পাহাড় ও সমতলে শিমের মাচায় রঙিন ফুলের সমারোহ

স্বদেশ ডেস্ক
  ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
পাহাড় ও সমতলে শিমের মাচায় রঙিন ফুলের সমারোহ

নীলফামারীর সমতল ভূমিতে ও খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার পাহাড়ে এবার শিমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে শিমের মাচা ভরে উঠেছে রঙিন ফুলে। সবুজের মাঝে শিমের এই রঙিন ফুল যেন সৌন্দর্যের আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, শিমের মাচায় সবুজের সঙ্গে দুলছে রঙিন ফুল। বেগুনি রঙের মনোমুগ্ধকর ফুলে প্রকৃতি সেজেছে দারুণ মুগ্ধতায়। মৌসুম শুরুর আগইে এমন মনোরম দৃশ্যে ভরে আছে ডাঙ্গাপাড়া এলাকার শিম বাগান। শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম শিম। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। আগাম বাজারে নামাতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে এমন প্রত্যাশা কৃষকদের। এছাড়া বাজারে দাম ভালো থাকায় এবার অধিক লাভের আশায় আগাম জাতের শিম চাষ করেছেন।

নীলফামারীর সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুড়ে দেখা গেছে, মাঠের কাজে কৃষকের ব্যস্ততা। অনেকে আগাম আবাদ করেছেন শিম, লাউ, মুলা, বেগুনসহ নানা জাতের সবজি। আবার অনেকে ব্যস্ত বিভিন্ন জাতের শাক চাষে। ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে সবজির চাষ বেশি হওয়ায় গ্রামটির নাম দিয়েছেন সবজি গ্রাম। ওই গ্রামের কৃষক তয়েজ উদ্দিন ও তাজুল ইসলাম বলেন, ৪০ শতাংশ করে জমিতে শিম চাষ করেছেন। তাদের শিম গাছে শিম আসতে শুরু করেছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাদের শিম বাজারে আসবে বলে জানান তারা। আগাম শিম চাষ করে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন এখানকার কৃষকরা।

ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন ও মরিচ। ইতোমধ্যে ৪৫ শতাংশ জমির কচুমুখী চাষ করে বিক্রি করেছেন ৮০ হাজার টাকায়। এ বছর বৃষ্টির কারণে সবজি চাষ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তার পরেও কপি, মরিচসহ কয়েক প্রকারের বেগুনের চারা লাগানো মতো হয়েছে। ওই গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, ক্ষেত থেকে বাজারে নেওয়ার জন্য লাউ সংগ্রহ করছি। গ্রামে এসে সবজি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। আমার ৬০ শতাংশ জমিতে আগাম আমন ধান চাষ করা আছে। ওই জমির ধান কেটে সেখানে বেগুন ও ভুট্টা চাষ করব। শীতকালীন সবজিতে লাভ বেশি পাওয়া যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৭০ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে এ বছর ১০ থেকে ১৫ দিন পিছিয়ে গেছে আগাম সবজি চাষ।

এদিকে, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিল পিচলাতলা এলাকায় পাহাড়ের ঢালে লিজ নেওয়া ৮০ শতাংশ জমিতে 'অটো শিম' বা মৌসুম ছাড়া শিম চাষ করছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৮০ শতাংশ জমিতে ৮০-৮৫ হাজার টাকা খরচের বিপরীতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রির আশা করছেন এই তরুণ শিমচাষি।

বেলাল হোসেন উপজেলা সদর ইউনিয়নের গচ্ছাবিল জামতলা এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তিনি সারা বছরই শিম চাষের পাশাপাশি মৌসুমভেদে বিভিন্ন কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। চলতি মৌসুমে ভালো ফলন এসেছে তার শিমের মাঁচায়। শীতের আগে বেশ চাহিদা থাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই সবজি।

শিমচাষি বেলাল হোসেন বলেন, 'আমি প্রতি বছরই গ্রীষ্ম এবং শীত মৌসুমে আগাম শিম চাষ করি। নিজের উপযুক্ত জমি না থাকায় লিজ নিতে হচ্ছে। এবছর বর্ষার মাঝামাঝিতে ৮০ শতাংশ টিলা ভূমিতে বারোমাসি 'অটো শিম' চাষ করেছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৮০-৮৫ হাজার টাকা। গেল বছরের চেয়েও এবার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। বাজারে শিমের চাহিদাও বেশি। প্রতি কেজি শিম পাইকারি মূল্যে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় প্রায় দেড় লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছি, আরও এক লাখ টাকার শিম বিক্রির আশা করছি। এবছর সব ধরনের খরচ বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকার উপরে লাভ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় অনেক ফুল ঝরে গেছে। তা-না হলে ফলন আরও ভালো হতো। প্রতি সপ্তাহে শিম সংগ্রহ করা হয়। শিম তুলে বস্তা ভরে রাখলে পাইকাররা এসে কিনে নেন। কৃষিকাজ, ফসল সংগ্রহ ও বস্তায় ভরে রাখতে পুরুষের পাশাপাশি সহায়তার হাত বাড়াচ্ছেন নারীরাও।'

স্থানীয় প্রবীণ কৃষক রুহুল আমিন বলেন, 'বেলাল বেশ কয়েক বছর ধরে পাহাড়ের ঢালে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করে আসছেন। ফলও বেশ ভালো হয়। তার থেকে পরামর্শ নিয়ে আমিও ২০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছি।'

এছাড়াও বেলাল হোসেনের দেখাদেখি স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহিম মন্ডল, মনির হোসেন ও কামরুল ইসলামসহ আরও অনেকেই শিম চাষে মনোনিবেশ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ বলেন, পাহাড়ে শিম চাষে বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। অনাবাদি টিলা-ভূমিতেও পরিকল্পিতভাবে শিম চাষ করলে লাভবান হওয়া যাবে। বেলাল হোসেনের মতো অন্যরাও শিম চাষে এগিয়ে আসলে এ অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান বলেন, 'প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক চাষি আছেন, যারা শ্রম দিয়ে মূল্যবান ফসল ফলান। আমরাও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে তাদের কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করছি। এ কারণেই কৃষকরা সফল হচ্ছেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে