কটিয়াদীতে নতুন জাতের ধান রোপণ করে কপাল পুড়ল কৃষকের
প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ব্রি ১০৩ ধানের বীজ রোপণ করে কয়েক শতাধিক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বীজ রোপণের পর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধানের শিষ গজানোর ফলে ধানে চিটা ধরাসহ ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী কৃষক।
তারা জানান, রোপা আমান ধান রোপণের জন্য বীজ সংগ্রহ করার সময় কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নতুন জাতের ব্রি ১০৩ ধান রোপণ করার পরামর্শ দেন। অল্প দিনে ও অন্যান্য ধানের চেয়ে ফলন বেশি হবে। তাদের পরামর্শে ইমরান সিডস্ ব্রি-১০৩ ধানের বীজ রোপণ করে প্রতারিত হয়েছেন কয়েকশ' কৃষক। এসব এলাকার মাঠের রোপণ করা ধান? গাছে সময়ের আগেই শিষ গজিয়েছে। এর ফলে আগেই পরিপক্ব হওয়ায় চিটে হয়ে মরে যাচ্ছে।
সেচ, কীটনাশক ও জমিতে নিয়োগ করা শ্রমিক খরচ বাবদ প্রতি বিঘা ধানক্ষেতে খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। এত টাকা খরচ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ জানায়, নতুন জাতের ধানের মধ্যে ১০৩ ধানের পরামর্শ দিয়েছে। তবে যারা বিভিন্ন কোম্পানির ব্রি ১০৩ ধান রোপণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যারা বিডিসির বীজ রোপণ করেছে তাদের ফলন ভালো হয়েছে।
মসূয়া ইউনিয়নের পং মসূয়া গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম জানান, 'ইমরান সিডস ব্রি-১০৩ জাতের ধানের চারা রোপণ করে প্রতারণার শিকার হয়েছি। ধানের শিষ বের হওয়ার পর দেখা যায় অধিকাংশ শিষ চিটা হয়ে মরে যাচ্ছে। এতে আমরা ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি।'
পং মসূয়া এলাকার কৃষক মনির হোসেন জানান, 'আমার এই জমির ধান দিয়ে পরিবারের তিন বেলা খাবার জোটে। এবার ভেজাল বীজ লাগানোর ফলে ধানে চিটা হয়েছে। এখন চিন্তা করছি পরিবার নিয়ে খাব কি?'
আচমিতা ইউনিয়নের অগ্রিয়েকোনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান, ভিটাদিয়া গ্রামের আবুল কাসেম রজব আলী, মো. হাসিম ও জয়নাল আবেদীন জানান- 'আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ব্রি ১০৩ জাতের নতুন ধান রোপণ করি। বীজ রোপণের পর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধানের শিষ গজানোর ফলে ধানে চিটা বের হতে শুরু করে। কৃষি অফিস দফায় দফায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয়। ওষুধ কিনে প্রয়োগ করেও কোনো ভালো ফল পাইনি।'
আচমিতা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াছিন জানান, 'আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসার ব্রি ১০৩ ধান রোপণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার কথা বলেন। তার কথা মত কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। ১০৩ জাতের ধান কেনো এমন হলো তা জানা নেই। তবে ধারণা করছি, বীজবাহী রোগ অথবা আবহাওয়াজনিত কারণে এ অবস্থা হতে পারে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকের অবস্থা উপজেলা কৃষি অফিসারকে জানিয়েছি।'
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম ভুইঞা জানান, ব্রি ১০৩ ধানসহ অন্য নতুন জাতের ধান রোপণ করতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। কৃষকরা বিভিন্ন কোম্পানির ধান রোপণ করায় ফসলের বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছি। আমরা মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করছি। বীজবাহিত কারণে ফসলের ক্ষতি হলে বীজ কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'