শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

পদ্মার ভেড়ামারা অংশে প্রকাশ্যে চলছে ইলিশ মাছ শিকার

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
পদ্মার ভেড়ামারা অংশে প্রকাশ্যে চলছে ইলিশ মাছ শিকার

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে জেলেরা নৌকা নিয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ মাছ শিকার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। গ্রাহকের কাছে সেগুলো পৌঁছাচ্ছে হোম ডেলিভারি'র মাধ্যমে। প্রকাশ্যে ধরা ও বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। ইলিশ মাছ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলায় নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহণ বন্ধ। সরেজমিন নদী তীরবর্তী এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেরা নৌকা নিয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ চলছে ঢিলেঢালাভাবে। বিগত বছরগুলোতে লাগাতার অভিযান চালানো হলেও এবার চলছে কচ্ছপগতিতে। নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকে পদ্মা নদীতে দিনে ও রাতে অবৈধভাবে ধরা হচ্ছে ইলিশ মাছ। উপজেলার বাহিরচর. মোকারিমপুর, বাহাদুরপুর ও জুনিয়াদহ ইউনিয়নের (৪টি ইউনিয়ন) পদ্মা নদীর ধারে ইলিশ মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। ভেড়ামারার ১২ মাইল এলাকা থেকে রায়টা পাথর ঘাট পর্যন্ত পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে জেলেরা নৌকা নিয়ে ইলিশ মাছ ধরছে। নদী এলাকায় চলছে এসব ইলিশ মাছ বেচাকেনা। বিশেষ ক্ষেত্রে শহরে এনে চোরাই ইলিশ হোম ডেলিভারিও দিচ্ছেন অসাধু জেলে ও তাদের লোকরা।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ও প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীদের ডালিতে করে ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন অবৈধ জেলেরা নদী থেকে ইলিশ শিকার করে তারা নদীর তীরে এনেই বিক্রি করছেন। ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ তারা ১২০০-১৫০০ টাকা ও ছোট (জাটকা) ইলিশ ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। তবে এ সময় নদীতে মৎস্য বিভাগের কাউকে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি।

রায়টার হাবিবুর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রতিদিনই বিভিন্ন অবৈধ জেলেরা পদ্মা থেকে কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ ধরে নদীর কিনারে নিয়ে আসছেন। সেখানে প্রকাশ্যে মৌসুমি মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া একটু কম দামে পাওয়ায় গ্রামের অনেক দরিদ্র মানুষ সেখান থেকে ইলিশ কিনছেন।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত কেউ ইলিশ মাছ ধরতে পারবে না। উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ের মধ্যে কেউ ইলিশ মাছ ধরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হবে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যেসব জেলে মাছ ধরছেন, তাদের ভিজিএফসহ অন্য সুবিধা বাতিল করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল, জরিমানা ও জব্দ করা জাল পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। ভেড়ামারা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাম্মি শিরিন বলেন, 'উপজেলার পদ্মা নদীর অংশে অভিযান চালিয়েছি। অভিযানে জব্দ করা ইলিশ এতিমখানায় দান করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের কাছে পাওয়া ৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য এক লাখ টাকা। ইলিশ শিকার ও বিক্রির বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

ভেড়ামারা থানার ওসি শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমি সবেমাত্র থানায় যোগদান করেছি। এখন ইলিশ মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। আপনাদের কাছ থেকে জেলেদের প্রকাশ্যে মাছ ধরা ও বিক্রির বিষয়টা জেনেছি। এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা পদ্মা নদীতে অভিযান চালাব।'

ভেড়ামারা ইউএনও মিজানুর রহমান বলেন, ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ। একে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর এই ২২ দিন সরকারিভাবে মাছ আহরণ পরিবহণ মজুত করা নিষিদ্ধ। এ সময় জেলেরা যেন কষ্ট না পায়, সে জন্য সরকার উপজেলার নিবন্ধনকৃত ৩৩২ জন মৎস্য চাষিকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে প্রতিজনকে ২৫ কেজি চাল দেবে। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ের মধ্যে কেউ ইলিশ ধরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে