ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাঈমের খুনিদের বিচার দেখে যেতে চান বাবা-মা
প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের রুবাইদুজ্জামান নাঈম ৪ আগস্ট বিকালে ঢাকার আশুলিয়ায় ছাত্র জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্য হয় গার্মেন্টকর্মী নাঈমের। তার অকাল মৃতু্যতে থেমে যায় পরিবারের সব স্বপ্ন।
ঢাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মী হিসেবে মাত্র দুই মাস হয়েছে নাঈমের। তার এবং হাফেজিয়া মাদ্রাসা শিক্ষক বাবা ও দর্জি মায়ের উপার্জন নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। তাদের কিন্তু স্বপ্ন অঙ্কুরে ধ্বংস করেছে পুলিশের গুলি। চার আগস্ট বিকালে গার্মেন্ট থেকে বেরিয়ে নাঈম যোগ দেন ছাত্র জনতার আন্দোলনে। এমন সময় আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পরদিন মধ্যরাতে মৃতু্য হয় তার। ৪ আগস্ট দুপুরে সবশেষ মোবাইল ফোনে কথা হয় বাবা-মায়ের সঙ্গে নাঈমের। সন্ধ্যার পর ফ্রি হয়ে কথা বলতে চাইলেও আর কথা বলতে পারেননি বাবা-মা। বরং খবর পান গুলিবিদ্ধ হওয়ার। অত্যন্ত ভদ্র শান্তশিষ্ট নাঈমের এই মৃতু্য কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না বাবা-মা, স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তার মৃতু্যতে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।
শহীদ নাঈমের মা রোকসেনা বেগম বলেন, 'আমাকে আর মা বলে কে ডাকবে। সে যে আমার বড় ছেলে। সে বাসায় থাকলে আমার পিছে পিছে ঘুরে বেড়াত। আমি যেখানে যেতাম, তাকে নিয়ে যেতাম। এই অভাব অনটনে নাঈম আমাদের স্বপ্ন দেখাতো, 'মা আমি ঢাকায় যেয়ে চাকরি করে পরিবারে সব সমস্যা দূর করব একদিন।' তোমাদের আর দুঃখ থাকবে না,' এভাবে বলত আমার ছেলে। এই স্বপ্ন নিয়ে দুই মাস আগে আমার ছেলে ঢাকায় যেয়ে চাকরি নেয়। ছেলের মৃতু্যতে আমাদের সব স্বপ্ন শেষ। আমি ছেলের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দেখে যেতে চাই।'
শহীদ নাঈমের বাবা আনিচুর রহমান জানান, 'আমার এই সরকারের কাছে একটি চাওয়া, আমি আমার ছেলের খুনিদের বিচার দেখে যেতে চাই।'
৬ আগস্ট বিকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় নাঈমের। তার কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। জীবিত অবস্থায় ছেলে হত্যার বিচার দেখে কিছুটা হলেও শান্তি চান বাবা-মাসহ স্বজন ও প্রতিবেশীরা।