ঘন কুয়াশা ও শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে আসতে শুরু করেছে শীত। একই সঙ্গে ঘুর্ণিঝড় 'দানা'র প্রভাবে ও শরতের বৃষ্টিতে অনুভূত হচ্ছে ঠান্ডা। এদিকে ঝড়-বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে নুয়ে পড়েছে আমন ধান। অন্যদিকে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে ঠান্ডা বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানিয়েছেন, গ্রীষ্ম-বর্ষা ও শরৎ ঋতু জুড়ে ওষ্ঠাগত গরম যেন হাঁপিয়ে তুলেছিল জনজীবন। এ হাঁসফাঁস প্রকৃতি থেকে স্বস্তি মেলাতে শরৎ বিদায়ে হেমন্তের কার্তিকে স্নিগ্ধ শিশির ভেজা ভোর, ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো সকাল আর হিম শীতল বাতাস জানান দিচ্ছে আগাম শীত। বলা হচ্ছে নীলফামারী জেলায় প্রকৃতিতে আগে ভাগে নেমে পড়া শীতের কথা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিগত কয়েক দিন ধরে ভোরের আকাশে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে মাঠ-প্রান্তর ও পথঘাট। ভোরের আকাশে রক্তরাঙা আলো ফুটতেই দূর্বাঘাস, মাকড়সার জালে আটকে থাকা স্নিগ্ধ শিশির বিন্দুগুলোও যেন মুক্তার দানার মতো দু্যতি ছড়াচ্ছে। প্রকৃতির কারিগর মাকড়সা যে জাল বুনেছে তাতে শিশির বিন্দু জমে যেন কোন সুন্দরীর খোঁপায় এক অসাধারণ অলংকার গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি সবুজ ধানের পাতাগুলো ভিজে উঠছে স্নিগ্ধ নীহারে। সূর্যের বর্ণচ্ছটায় শীষের ডগায় নুয়ে পড়া কাঁচের মত শিশির বিন্দুগুলো যেন প্রতিবিম্ব হয়ে উঠছে সবুজ প্রকৃতিতে।
আগাম শীতের মায়াবী প্রকৃতির এমন অবয়ব এরই মধ্যে যেন বিমুগ্ধ করতে শুরু করেছে সবাইকে। অন্যদিকে সকালের ঘন কুয়াশার ধুম্রজাল আর উত্তর থেকে ধেয়ে আসা শিরশিরে বাতাস সমস্ত শরীর জুড়ে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে। গোধূলি লগ্নের রাঙা সূর্য সবাইকে রোমাঞ্চিত করে দ্রম্নতই নামিয়ে দিচ্ছে সন্ধ্যা। শেষ রাতের হিম শীতল বাতাস কাঁটা দিচ্ছে শরীরে। এসময় গায়ে চাপাতে হচ্ছে হালকা কাঁথা-কম্বল। সব মিলে শরৎ বিদায়ে হেমন্তের কার্তিকের শুরু থেকেই শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে।
নীলফামারী সরকারী টেকনিকেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিক সফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কার্তিকের পর অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ-মাঘ শীতকাল ধরা হলেও এবার আশ্বিন মাস শেষে কার্তিকের শুরু থেকে শীত অনুভূত হচ্ছে। শেষ রাতে ফ্যানের রেগুলেটর কমিয়ে রাখাসহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। শীতের আমেজ নয়, যেন পুরোদস্তুর নেমেছে শীত।
নীলফামারী প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি আতিয়ার রহমান বাড্ডা বলেন, এ জনপদে এবার আগেভাগে শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পারদও কমছে। এতে সকাল ও মধ্যে রাতে একটু ঠান্ডাভাব অনুভূত হচ্ছে।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গপোসাগর থেকে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় 'দানা'র প্রভাবে ধরলা নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় গত দুইদিনের দমকা হাওয়া ও ঝড় বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে। হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ায় এখানে অনুভূত হচ্ছে ঠান্ডা। এখানকার মানুষ শরীরে মোটা কাপড় পরিধান করছেন। রাতে ঠান্ডায় কাঁথা ও পাতালা কম্বল ব্যবহার করতে ভুল করছেন না অনেকে।
এদিকে, দমকা হাওয়া ও ঝড় বৃষ্টিতে কৃষকের চলতি আমন ক্ষেতের আধা পাকা ও কাঁচা শীষ বের হওয়া ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এখনো নুয়ে পড়া ধানের ক্ষেতের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি কৃষি অফিস। তবে পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে। কৃষকের ধারনা উপজেলার ৬ ইউনিয়নের শতাধিক বিঘা জমির আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। নুয়ে পড়া ধানের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ও গুটি স্বর্ণ জাতের ধানের পরিমাণ বেশি।
এদিকে এখানকার নীচু এলাকার আমন ক্ষেতগুলোতে পানি জমে থাকায় ওসব ক্ষেতে শীষ বের হওয়া আধা পাকা ধান নুয়ে পড়ায় চিন্তিত কৃষক। জমে থাকা পানিতে ধান পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই বাধ্য হয়ে কিছু কিছু স্থানে আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।
ফুলবাড়ী সদরের পশ্চিম কুটিচন্দ্রখানা চেয়ারম্যান পাড়ার কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, 'দুইদিনের দমকা হাওয়া ও ঝড় বৃষ্টিতে আমার প্রায় এক বিঘা জমির আধা পাকা আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়ে। ক্ষেতটি নীচু এলাকায় হওয়ায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ধানগুলো পড়ে থাকায় বাধ্য হয়ে আধা পাকা আমন ধান কেটে নিয়েছি।'
একই এলাকার কৃষক সাইফুর রহমান, আশরাফুল হক, মোহাম্মদ আলী ও সাইদুল ইসলামসহ আরও অনেকের আধা পাকা ও কাঁচা শীষ বের হওয়া ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে। নুয়ে পড়ায় এসব ধানের ফলন বিপর্যয় ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ধানের চিটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, এবার ফুলবাড়ী উপজেলায় লক্ষমাত্রার ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়। দমকা হাওয়া ও ঝড় বৃষ্টিতে কত পরিমান ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে তার পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সারাদিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে স্থবীর হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাস্তা-ঘাট শহর জনশূন্য, বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
শুক্রবার রাত থেকে থেমে শুরু হয়েছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। শনিবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় ঘর থেকে বের হননি অধিকাংশ মানুষ। ফলে শহরের রাস্তা-ঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আর শীতল হাওয়াকে উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে খেটে খাওয়া মানুষ বের হলেও তাদের রোজগার নেই বললেই চলে। এই মঙ্গার বাজারে রোজগার বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।
কয়েকজন রিকশাচালক বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া, এর উপর রোজগার নেই। তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে বের হলেও শহরে মানুষ না থাকায় যাত্রী পাচ্ছেন না। এতে করে তাদের জীবিকা অচল হয়ে পড়েছে। এদিকে শরতের ঠান্ডা বৃষ্টি ও শীতল হাওয়া শীতের আগাম বার্তা দিচ্ছে এ জেলায়। বয়স্ক ব্যক্তিরা জানান, এ অঞ্চলে শরৎ শেষে ও হেমন্তের শুরুতে শীত শুরু হয়। কিন্তু শরতের এই শীতল বাতাশ আগাম শীত এনে দিয়েছে এ জেলায়।