রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

মৎস্য ভান্ডার কাপ্তাই হ্রদে ৮১ প্রজাতি মাছের সন্ধান

৯ প্রজাতি বিলুপ্ত
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে ব্যস্ত মৎস্যজীবীরা -যাযাদি

ষাটের দশকে প্রমত্তা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যে সুবিশাল জলাশয় তৈরি হয়েছে, কালের পরিক্রমায় সেটিই এখন এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ 'কাপ্তাই হ্রদ'। হ্রদটি দেশীয় মৎস্য প্রজাতির এক বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধশীল পানি এবং মৎস্যভান্ডার হিসেবে বেশ পরিচিত।

চলতি বছরে ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে পানি বাড়ায় কাপ্তাই হ্রদে মিলছে দেশি-বিদেশি অন্তত ৮১ প্রজাতির মাছ। পাহাড়ের কোল ঘেঁষা হ্রদে এ যেন মাছের সমাহার। এতে লাভের মুখ দেখছেন স্থানীয় জেলে ও ব্যবসায়ীরা।

দেশের সবচেয়ে বড় জেলা পার্বত্যাঞ্চলের রাঙামাটিকে সর্পিলাকারে ঘিরে রাখা এ হ্রদের তীরবর্তী জীবন, পাহাড় আর প্রকৃতি পার্বত্য শহর রাঙামাটিকে রূপের রাণী খ্যাত অরণ্যসুন্দরী নামেই বিখ্যাত করেছে সর্বত্র। শুধু তাই নয়, এই হ্রদ এখন পার্বত্য জনপদের মানুষের জীবন আর জীবিকার অংশই বটে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এই হ্রদের উৎপাদনশীলতা, মৎস্য প্রজাতি বিন্যাস, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ এবং হ্রদে মৎস্য চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ৮০'র দশক থেকে গবেষণা করে আসছে।

গবেষণার সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, এই হ্রদে ২ প্রজাতির চিংড়ি, ১ প্রজাতির ডলফিন, ২ প্রজাতির কচ্ছপ ও ৭৮ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৭১ প্রজাতির মাছ হচ্ছে দেশীয়, আর বাকি ১০টি বিদেশি। এদিকে গত দেড় দশকে কাপ্তাই হ্রদে ৬ প্রজাতির মাছ বেড়েছে। ২০০৬ সালে হ্রদে ৭৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও ২০২২ সালের গবেষণায় ৮১ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব মিলেছে। এরমধ্যে বর্তমানে ৪২টি প্রজাতির মাছ এই হ্রদে বাণিজ্যিকভাবে আহরিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে চাপিলা, তেলাপিয়া, কেচকি, মলা, কাটা মইল্যা, বাটা, ফলি, আইড়, গজার, শোল অন্যতম। অবশিষ্ট প্রজাতিগুলোর বাণিজ্যিক গুরুত্ব না থাকলেও জীবতাত্ত্বিক গুণাগুণ ও অন্যদিক বিবেচনায় হ্রদের সামগ্রিক মৎস্যকুলের অবস্থানে তাদেরও ভূমিকা অনন্য।

বিএফডিসি সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫-৬৬ অর্থবছরে মাত্র ১২০৬.৬৩ মে. টন মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদে বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য উৎপাদন শুরু হয়। কালের পরিবর্তন ও খননের অভাবে হ্রদ থেকে বেশকিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হলেও কমেনি উৎপাদন।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ সালে ৮৬৪৪ মে. টন মাছ আহরণের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ সালে ৯৫৮৯ মে. টন মাছ আহরণের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ২০১৬-১৭ সালে ৯৯৭৪ মে. টন মাছ আহরণের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ১২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই খাতে আয় ছিল ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। মৎস্য আহরণ হয় রেকর্ড ১০ হাজার ৫৮৭ মে. টন। ২০১৮-১৯ এই আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। এভাবে পালাক্রমে বেড়েই চলছে মৎস্য আহরোণ ও রাজস্ব আয়ের রেকর্ড। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ আয়।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভুইয়া জানান, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাঙামাটির অধীন ৬টি অবতরণ কেন্দ্রে মোট ৭ হাজার ৬৩৭ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হয়, এতে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মোট শুল্ক আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদ এক বছরের জন্য সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসককে ৫৫ লাখ টাকা ইজারা দেয় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ১৫ বছরে বিলুপ্ত হয়েছে সিলন, দেশি সরপুঁটি, ঘাউরা, বাগাড়, মোহিনী বাটা ও দেশি পাঙাশ মাছ। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে মহাশোল, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, গুলশা ও ঘনিয়া মাছ। ক্রম-হ্রাসমান প্রজাতির মধ্যে রয়েছে রুই, কাতল, মৃগেল, বাঁচা, পাবদা ও চিতল প্রজাতির মাছ।

তবে এমন উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রতিবছর হ্রদে সব ধরনের মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য মে থেকে তিন-চার মাস মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ ও পরিবহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে প্রশাসনের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে