কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার অস্কার বিজয়ী সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়ির পুকুর ঘাটের সংলগ্ন লাল শাপলা ফুলে রঙিন মরা নদী। জলের ওপর বিছানো থালার মতো গোলাকার সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লম্বা ডগার ওপর লাল শাপলা। অসংখ্য পাপড়ির চমৎকার বিন্যাসে সজ্জিত একেকটি শাপলা যেমন সুগন্ধি ছড়ায়, তেমনি যে কোনো মানুষের হৃদয় কাড়ে সহজেই। তাই হয়তো শাপলার স্পর্শ থেকে আটকে রাখতে পারে না যে কোনো বয়সের মানুষকে।
শাপলা ফুল ভোরবেলা ফুটে এবং দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়ি বুজে যায়। সরাসরি কান্ড ও মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে ফুল। শাপলার পাতা আর ফুলের কান্ড পানির নিচে মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির ওপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতা জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয়, কিন্তু নিচের দিকে কালো রঙ। ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। শাপলা ফুল নানা রংয়ের দেখা যায়। সাদা শাপলা দেশের জাতীয় ফুল।
সরেজমিনে দেখা যায়, অস্কার বিজয়ী সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়ির পুকুর ঘাটসংলগ্ন মরা নদীতে লাল রঙের শাপলা ফুল ফুটে আছে। শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমিরা ছুটে আসছেন। দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা স্মৃতি ধরে রাখতে মুহূর্তগুলো করে রাখছেন ক্যামেরাবন্দি।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। শাপলা ফুলের অনিন্দ্য সৌন্দর্য আগে বর্ষা ও শরৎকালে বিলে-ঝিলে জলের ওপর ফুটে থাকত মনোহরি পদ্ম ও শাপলা ফুল। কিন্তু দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক জলজ উদ্ভিদ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। আগের মতো বিল-ঝিলের জৌলুসতা এখন নেই। এতে হারিয়ে যাচ্ছে শাপল ও পদ্ম ফুলসহ আরও অনেক জলজ উদ্ভিদ।
উদ্ভিদবিদের মতে, পদ্মর সুবাস শাপলার চেয়ে তুলনামূলক বেশি। তবে দুটোই দুই ধরনের জাত। ফুল ও পাতা আলাদা। পদ্ম ফুল শাপলা ফুল থেকে আকারে বড়। অন্যদিকে শাপলা ফুল আকারে ছোট। পাপড়িগুলো চিকন এবং লালচে রঙের।
শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত গ্রামীণ জনপদে শাপলা ও পদ্মর খোঁজ মেলে।
অস্কার বিজয়ী সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়িটি দেখতে আসা তোফাজ্জল হোসেন জানান, 'আমরা একই সঙ্গে দু'টির সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। পুকুর ঘাটসংলগ্ন মরা নদীতে ফোটা লাল শাপলা ফুলগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করি। লাল বর্ণের এই ফুল যে কারও নজর কাড়বে। স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মুঠোফোনে ছবি তুলে রেখেছি।'
কটিয়াদী সদর ভোগপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার কৃষি শিক্ষক খাইরুল ইসলাম জানান, পদ্ম আর শাপলা এক নয়। এদের নাম ও আকার ভিন্ন। শ্রাবণ মাসে শাপলা ও পদ্ম ফুল ফুটে বলে একে 'জলজ ফুলের রানি' বলা হয়। জলজ উদ্ভিদ শাপলা ও পদ্ম প্রাকৃতিকভাবে হয়ে থাকে। তবে বিল-ঝিল, জলাশয়, ডোবা ভরাট হওয়ায় অনেকটাই এগুলো বিলুপ্তির পথে।