শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

নদীর চরে আশ্রয়ণ প্রকল্প ভোগান্তিতে বাসিন্দারা

এসএ প্রিন্স, নীলফামারী
  ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর -যাযাদি

নীলফামারীর ডিমলায় ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেলস্নাপাড়া গ্রামে তিস্তা নদীর দুর্গম চরে নির্মাণ করা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘর। বর্ষা মৌসুমে এখানে পানি উঠে যায়। তখন বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে এসব ঘরের অনেক বাসিন্দা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে নিচু জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে। যে স্থানে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ আসে। প্রকল্পের দেড় শতাধিক মানুষ বছরে ৪ থেকে ৫ মাস পানিবন্দি থাকে।

জানা গেছে, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নটি তিস্তা নদীবেষ্টিত। আর কেলস্নাপাড়া গ্রামটি তিস্তার দুর্গম চরে অবস্থিত। এলাকাটিতে জনবসতি কম। সেখানে আবাদি ও অনাবাদি ফসলি জমি বেশি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কেলস্নাপাড়া গ্রামে তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। জনপ্রতি ২ শতক জমিসহ একটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৯১ হাজার টাকা।

স্থানীয়রা জানান, যে স্থানে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে ১৫ বছর আগে নদীর প্রবাহ ছিল। পরে নিচু জায়গায় জেগে ওঠা চরে আশ্রয়ণের ঘরগুলো নির্মাণ হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের ঘরগুলো উপজেলার শেষ সীমানায় দুর্গম চরে নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাটির চারদিকে তিস্তা নদী। বর্ষায় পানিতে তলিয়ে থাকে। নদীভাঙনের আতঙ্কও আছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বর্ষায় প্রকল্পের চারপাশে কোমরসমান পানি থাকে। ঘরের জানালা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে। যাতায়াতের রাস্তা নেই। বর্ষাকালে পানি-কাদায় এখানে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

প্রকল্পের বাসিন্দা শফিফুল ইসলাম বলেন, তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বাস করেন। সামান্য বন্যাতেও নদীর পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। তারা জিনিসপত্র, চাল-ডাল, গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপদে পড়েন। বানেছা বেগম নামে একজন বলেন, 'সরকার হামাক এমন জায়গাত ঘর দিছে, বছরের পাঁচ মাস পানিবন্দি থাকির নাগে। ছাওয়া গিলা স্কুল যাবার পায় না। বড় বান আসিলে হামাক ঘরোত পানিতে মইরবার নাগিবে।'

'তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও' সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, এই আশ্রয়ণ প্রকল্প ভূমিহীনদের জন্য বড় আশীর্বাদ হতে পারত। কিন্তু নিচু জায়গায় অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দিন শেষে তাদের উদ্বাস্তু হওয়ারই দশা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের কোটি কোটি টাকাও অপচয় হলো। ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, 'আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। তবে বাঁধের বাইরে নদীর চরে ওই ঘরগুলো নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। বাঁধের ভেতরে ঘর নির্মাণ করলে এ সমস্যা হতো না।'

ঘর নির্মাণ কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেজবাহুর রহমান বলেন, প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণের দায়িত্ব ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তারা শুধু প্রকল্পের ঘর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছেন। ইউএনও রাসেল মিয়া বলেন, 'আমি এখানে যোগদানের অনেক আগে আবাসন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'

জেলা প্রশাসক নায়িরুজ্জামান রাসেল মিয়া বলেন কেন, কী কারণে নদীর চরে প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে