যশোরে সবজি ক্ষেতে পানি হেলে পড়েছে আমন ধান

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
যশোরে ঘুর্ণিঝড় 'দানা'র প্রভাবে বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসল -যাযাদি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'দানা'র প্রভাবে যশোরে দুই দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের পর বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত আর মাঝে মধ্যে দমকা হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমন ধান ও সবজি খেত। আর অসময়ের এই বৃষ্টিপাতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে যশোরে বুধবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত। কখনো মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বইতে থাকে দমকা হাওয়া। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত একই অবস্থা বিরাজ করছিল। যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত যশোরে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে বুধবার ১২ মিলিমিটার এবং বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে, দুদিন ধরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও বৃষ্টির কারণে বাইরে বের হওয়া সাধারণ মানুষ পড়েন বিপাকে। তারা বিভিন্ন স্থানে আটকে যান। ফলে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। কেউবা ছাতা নিয়ে বা রিকশায় চড়ে জরুরি কাজে বাড়ির বাইরে হতেও দেখা গেছে। শহরের মুজিব সড়কস্থ এলাকায় দেখা যায়, বৃষ্টিতে আটকা পড়ে অনেকেই বিভিন্ন দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থীকে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। রিকশাচালকরা পলিথিন জড়িয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশা চালক আলেক মিয়া বলেন, 'বৃষ্টি আসলে আর কী করার আছে? আমাদের ঝড়ই কী আর বৃষ্টিই বা কী। কাজ করেই খেতে হবে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই রিকশা চালালাম। এখন বাড়ি যাচ্ছি।' শহরের কোর্ট মোড়ে এক মার্কেটে আশ্রয় নেওয়া এক অভিভাবক বলেন, 'আমার মেয়ে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। স্কুল ছুটির সময় হওয়ায় মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলাম। এমন সময়ে বৃষ্টিতে আটকে গেলাম।' তবে অসময়ের এই বৃষ্টি ও বাতাসে ক্ষতির মুখে পড়েছেন যশোরের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে সবজি চাষ নিয়ে চাষিদের চিন্তার শেষ নেই। আবাদ করতে গিয়ে শুধু খরচ আর খরচ। বারবার চারা রোপণ করতে গিয়ে একদিকে যেমন খরচ বাড়ছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে শীতের সবজির চারা রোপনের মৌসুম শেষের দিকে। এবার যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় দানার। এর প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির কারণে সবজির জোন যশোরে মাঠের সবজি ক্ষেত ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে। এর পাশাপাশি মাঠের পর মাঠ আমনের ক্ষেত হেলে পড়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, যেসব ধানের শীষ বের হয়নি ও দানা নরম সেই ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের আব্দুলপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'এবার সবজি চাষিদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গত তিন মাস ধরে চাষিরা সবজি চাষ নিয়ে বিপাকের মধ্যেই রয়েছেন। শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করলেই কিছুদিন পর পর হওয়া বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঝিকরগাছা উপজেলার নিচিন্তপুর গ্রামের কৃষক সুমন কবির বলেন, 'গত কয়েক মাস ধরে যে অতিবৃষ্টি হলো। এতে অনেক নিচু অঞ্চলের জমিতে ধানের চারা ডুবে গিয়ে পচে গেছে। উঁচু জমিতে ধান ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে ঝড়ে ধান গাছগুলো হেলে পড়েছে। আমার দেড় বিঘার ধান হেলে পড়েছে। ধানের শীষে যে দানা রয়েছে, তা এখনো শক্ত হয়নি। অনেক ধান চিটা হয়ে যাবে। আর যে ফলন হওয়ার কথা ছিল তাও কমে যাবে। বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ ফলন হয়। কিন্তু হেলে পড়ায় ৫ মণ কমে যাবে।' যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এবার অতিবৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগাম শীতকালীন সবজি চাষিরা। বারবার ক্ষতির শিকার হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। বাজারে সবজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামে এর প্রভাব পড়ছে। আর শুনেছি ঝড়ে কিছু জায়গায় ধান গাছ হেলে পড়েছে। ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট দমকা হাওয়ায় পড়ে যাওয়া যেসব ধানের দানা শক্ত হয়ে গেছে, সে ধানের ক্ষতি হবে না। তবে যে সব ধানের শীষ বের হচ্ছে এবং দানা এখনো শক্ত হয়নি। সেই ধানের একটু ক্ষতি হয়ে যাবে।