রাজশাহীতে ১৭ দিনে তিন অটোরিকশা চালক খুন

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
রাজশাহীতে চলতি মাসের ১৭ দিনে তিনজন চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দামকুড়ার ল'পাড়া ও পবার ভুগরোইল এলাকায় দুইজনকে হত্যায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে কাটাখালীতে অটোরিকশা চালক আলম হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি। পুলিশের ধারণা, হত্যাকান্ডগুলো ঘটেছে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশে। সব হত্যাকান্ডের ঘটনা রাতেই ঘটেছে। পরে রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, রাতে অটোরিকশায় যাত্রী নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে চালকদের। আর যাত্রী ওঠার পর সন্দেহ হলে দ্রম্নত পুলিশকে জানাতে হবে। সর্বশেষ গত সোমবার (২১ অক্টোবর) পবার ভুগরোইল এলাকা থেকে হত্যাকান্ডের শিকার সিরাজুল ইসলামের (৬৫) মরদেহ কলাইয়ের খেতে চাপা দেওয়া মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। রক্তাক্ত মরদেহে ছিল জখমের চিহ্ন। এর আগে সিরাজুলের থেকে ছিনতাই করা অটোরিকশা বিক্রিকালে জেলার গোদাগাড়িতে জনতার হাতে আটক হন ফিরোজ আলী (১৯), মো. রাতুল হাসান (১৯) ও মো. শুভ (১৯) নামের তিন যুবক। তাদের বাড়ি রাজশাহী নগরীতে। পুলিশ জানায়, রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে রাজশাহীর এয়ারপোর্ট থানার ভুগরইল গ্রামে সিরাজুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। পরের দিন সোমবার (২১ অক্টোবর) পুলিশ সিরাজুলের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি নওগাঁ মহাদেবপুর উপজেলার কাঞ্চন গ্রামের বাসিন্দা। এয়ারপোর্ট থানার ওসি শাহিন আকতার জানান, রোববার রাতে তিনজন অটোরিকশা চালক সিরাজুল ইসলামকে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে চলে যায়। সোমবার সকালে গোদাগাড়িতে গিয়ে তারা অটোরিকশাটি বিক্রির চেষ্টা করে। এ সময় তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে স্থানীয়রা আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। পরে গোদাগাড়ি থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এয়ারপোর্ট থানা পুলিশকে জানায় গোদাগাড়ি থানা। পরে ওই তিনজনকে নিয়ে তাদের দেখানো স্থান কলাই খেতে মাটিচাপা দিয়ে রাখা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে তার মৃতু্য নিশ্চিত করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না তা জানতে আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী বাজারসংলগ্ন এলাকায় সড়কের পাশ থেকে অটোরিকশা চালক আলমের (৬৫) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, আলমের রিকশাটি নেওয়ার জন্য ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে। কাটাখালী থানার ওসি আবদুল মতিন বলেন, আলমের মরদেহের গলা ও বুকে ধারালো অস্ত্রের জখম ছিল। রাতে সড়কের পাশে মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি পুলিশে খবর দেন। নিহতের ঘটনায় থানায় আলমের ছেলে বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর দামকুড়া থানার ল'পাড়া গ্রামে সাজামুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালকের মরদেহ পাওয়া যায়। তাকেও খুনের পর রিকশাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে ৪ অক্টোবর মাসুম আলী (৩৪) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। মাসুম আদালতে জানান, সাজামুলের রিকশা তিনি সিরাজগঞ্জে নিয়ে বিক্রি করেছিলেন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো যাত্রীবেশে ঘটেছে। হত্যাকারীরা যাত্রী হয়ে অটোরিকশায় উঠে একটা গন্তব্যে যায়। তারপর এ হত্যাকান্ড ঘটায়। অল্প দিনের মধ্যে ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনা প্রায় একই। এসব ঘটনায় পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছে। তিনি আরও বলেন, রাতে যাত্রী নিয়ে এবং দূরে বা নির্জন এলাকায় ভাড়া নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অটোরিকশা চালকদের সচেতন হতে হবে। যাত্রীদের আচরণে খারাপ কিছুর আভাস পেলে ৯৯৯ বা আরএমপির হটলাইনে যোগাযোগ করলে দ্রম্নত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।