কুশিয়ারার কালারবাজারে জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের পাঁয়তারা
৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার জলাশয় দখল
প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
মো. আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় চার কিয়ার জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে একটি মহল। ভরাট করা ওই জমির মূল্য প্রায় চার কোটি ৮০ লাখ টাকা। এদিকে জলাশয় ভরাট করায় পাউবো জমি সার্ভে করে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী শত বছর বয়সি কালারবাজারে পাউবোর জলাশয় ভরাট করে রাখা হয়েছে প্রায় চার কিয়ার জমি। স্থানীয় ও নদীর ওপারের বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় পাঁচ ব্যক্তি এসব জলাশয় ভরাট করেছেন এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা আরও জানান, বাজারের জমি এখন অনেক মূল্যবান। এখানে প্রতি শতক ভূমি সর্বমূল্য চার লাখ টাকা ধরা হলে চার কিয়ার জমির দাম পড়ে প্রায় চার কোটি ৮০ লাখ টাকা।
কাউয়াদিঘী হাওড়ে উন্নত কৃষি ব্যবস্থা বাড়াতে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সর্ব-বৃহত্তম সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পটির মাধ্যমে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার ২২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের রক্ষণাবেক্ষণে ও পাউবোর ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে এবং এটি সমাপ্ত হয় ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলদিগুল হয়ে কালারবাজার-খেয়াঘাটবাজার থেকে মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট এলাকা পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার হাওর বেষ্টিত ও নদীর কিনারায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়। মূলত কুশিয়ারা ও মনূ নদের জলের কবল থেকে কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষাসহ মনু ব্যারেজ দিয়ে শুস্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ করতে প্রায় একশ' কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে পাউবো।
ওই সময়ে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করে কালারবাজারসহ অন্যান্য জলাশয় থেকে মাটি উত্তোলন করে ৪৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এখন পরিত্যক্ত এসব জলাশয় দিনদিন বেদখলে যাচ্ছে।
উত্তরভাগ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও বাজারের ব্যবসায়ী মজনুর রহমান বলেন, 'বাজারে বালু ভরাটকারীরা কিভাবে বন্দোবস্ত এনেছেন ও কিভাবে ভরাট করিয়েছেন তা আমরা জানি না। এটি কি বন্দোবস্ত নাকি তাদের নিজেদের জলাশয় তাও আমার জানা নেই।'
জলাশয় ভরাটকারী নদীর ওপারের বালাগঞ্জ উপজেলার ডেকাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কালারবাজারের ব্যবসায়ী সাদ্দেক মিয়া বলেন, 'আমি সঠিক রয়েছি। আইনি প্রক্রিয়ায় ২৫ বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে থেকে জলাশয় এনে এখন মাটি ভরাট করেছি।'
এদিকে যত্রতত্র স্থাপনা নির্মিত হলে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতিসহ সড়কে যানজট বাড়বে বলে দাবি করেছেন পরিবেশবিদরা। বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদর সদস্য আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, অবৈধভাবে যারা পাউবোর জলাশয় দখল করেছেন, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। যত্রতত্র জমিদখল করে স্থাপনা নির্মাণ হলে পরিবেশ ও প্রকৃতির মারাত্মক সমস্যা হবে।
পাউবোর রাজনগর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল আমিন বলেন, বহু আগে 'জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না' এমন শর্তে মাত্র ৩ বছরের জন্য জলাশয় বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে এই বন্দোবস্ত দেওয়া বন্ধ হয়। যারা বলেন, ৯৯ বছরের জন্য পাউবোর কাছ থেকে বন্দোবস্ত এনেছি, তাদের প্রমাণাদি দেখাতে বললে আর দেখাতে পারেন না।
মৌলভীবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, 'কালারবাজারে আমাদের জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে সরেজমিন লোক পাঠিয়েছি। এখানে জলাশয় আমাদের আছে, তাদের ও থাকতে পারে। আমরা জমি সার্ভে করে আমাদের ভূমি বের করে 'ডিমাগ্রেশন'সহ ভরাটকারীদের চিঠি দেব। যাতে তাদের ভরাটকৃত মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়। এই চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আমরা প্রেরণ করে আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো।'