বগুড়ায় গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য শেখ হাসিনার উপহারের ঘরগুলো নদীগর্ভে বিলীনের পথে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলায় ইতোমধ্যে অর্ধেক ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর বাকি অর্ধেক ভেঙেচুরে ইটগুলো নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় চরাঞ্চলের মানুষ।
নদীভাঙনের ধরন অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, আর দু-চারদিনের মধ্যেই আবাসন প্রকল্পের চিহ্নই থাকবে না। অপরিকল্পিতভাবে এ প্রকল্পটি তৈরির কারণে সরকারের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ বিলীন হয়ে গেল।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক ঘর বিলীন হয়ে গেছে। অন্যসব ঘরের টিন ইতোমধ্যে যে যার মতো করে খুলে নিয়ে গেছে। ইটগুলোও খুলতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয়রা। কারণ ঘরগুলোর নির্দিষ্ট তেমন কোনো মালিক ছিল না। চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত হোসেনের তত্ত্বাবধানেই ছিল সেগুলো। শওকতসহ কয়েকজনের প্রায় ৬ থেকে ৭০০ গরুর খামার ছিল এটি। খামারটি দেখাশোনার জন্য কয়েকজনকে রাখা হয়েছিল এখানে, যাদের মাসিক বেতন দেওয়া হতো।
এ ছাড়া বেশকিছু ঘর ছিল ওপারের কৃষকদের। কারণ ফসলের সময় এসে এখানে থেকে লাখ লাখ টাকার ফসল কাটা-মারাই করত তারা। এই কৃষকদের ঘর দিতে তাদের কাছে থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। তারাও এসে অবশিষ্ট ঘরের টিন ও ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে কয়েকজন অসহায় ব্যক্তিরও বসবাস ছিল এখানে। তাদের ঘরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কয়েকটি টিন সংগ্রহ করে এখানেই কোনোভাবে মাথা গুঁজে আছেন। টিউবওয়েল, চুলা ও টয়লেটগুলোও গেছে নদীগর্ভে। চরম হতাশায় দিন কাটছে তাদের।
২০২১-২২ অর্থবছরে এখানে ৪টি ঘর নির্মাণের নামে একটি ভুয়া প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। এ প্রকল্পের কোনো নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেন সদ্য বদলিকৃত সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান। ওই সময় বিশেষ বরাদ্দের একটি প্রকল্পের নামে মাটি কাটার জন্য কোটি টাকার একটি বরাদ্দ নেওয়া হয়। তাতেও ছিল চরম অনিয়ম। ওই প্রকল্পে মাত্র কয়েক লাখ টাকার মাটি কেটে লুট করা হয়েছিল কোটি টাকা। এসবে জড়িত ছিল সাবেক এমপি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখানে ৬৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলোর কাজ একেবারেই নিম্নমানের ইট, বালু, রড, টিন, কাঠসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে তৈরি হলেও, ধু-ধু যমুনা চরে হওয়ায় এসবে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না কারও। ঘরগুলো ভেঙে যাওয়ায় নিম্নমানের কাজের সত্যতা চলে এসেছে।
কথা হয় ইট খুলতে আসা হাবিবুর ও সবুজ সরকারের সঙ্গে। তারা বলেন, 'এই ঘরগুলো একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যদিও কাজের সময় নদী দূরেই ছিল। কিন্তু এখানে থাকবে কে। নেই কোনো বাজার ও যোগাযোগের ব্যবস্থা। নৌকাও পাওয়া যায় না।
এখান থেকে যে কোনো বাজারে গেলে যাওয়া-আসাতেই খরচ হয় প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। যে কারণে এখানে কোনো মানুষ থাকেনি। এটি ছিল মূলত প্রভাবশালীদের গরুর খামার।'
অসহায় নার্গিস ও রহিমা বলেন, 'আমরা কয়েকজন এখানে ছিলাম খুবই কষ্টে। কারণ বাজার পাইতাম না। কই পামু, বাজার করার টাকাই তো নেই। যাওয়া-আসা করমু কিভাবে।
তাও থাকতাম কারণ থাকবার মতো কোনো জায়গা নেই। এখন তো সেটাও চলে গেল কি উপায় করমু।'
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, 'আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যদি অন্য কোথাও পুনর্বাসিত হতে চায় তবে তাদের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া যার যার ঘর তাদের সরিয়ে নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'